তীব্র গরমে সুস্থ থাকার ঘরোয়া টিপস: সহজেই মানুন, সুস্থ থাকুন

- আপডেট সময় ০৬:৪৪:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
- / 3
বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল মানেই প্রচণ্ড রোদ, ঘামঝরা দিন আর শরীর দুর্বল করে দেওয়া তাপদাহ। এই সময়ে শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। না হলে হিট স্ট্রোক, পানিশূন্যতা, ঘামাচি, ত্বকের সমস্যা কিংবা দুর্বলতার মতো নানা অসুস্থতা হানা দিতে পারে। চলুন জেনে নেই কিছু কার্যকর ও সহজ ঘরোয়া টিপস। আসুন জেনে নেই, তীব্র গরমের সুস্থ থাকার কিছু সহজ ঘরোয়া উপায়ঃ
১. পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি ও খনিজ লবণ বের হয়ে যায়, ফলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। শুধুমাত্র পানি নয় ডাবের পানি, লেবু পানি, ঘরে তৈরি ওরস্যালাইনও খুবই উপকারী। শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে পানিতে একটি পাতিলেবুর রস ও সামান্য লবণ মিশিয়ে পান করুন। এমনকি কিছু সময় পরপর ছোট ছোট চুমুকে পানি পান করাও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। চা-কফি ও সফট ড্রিংক কম পান করুন, কারণ এগুলো শরীরকে আরও ডিহাইড্রেট করে ফেলে।
২. হালকা ও সুতির পোশাক পরুনঃ তীব্র গরমে ঘন ও সিনথেটিক কাপড় শরীরের ঘাম আটকে দিয়ে ত্বকের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং হালকা, ঢিলেঢালা ও সুতির কাপড় বেছে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো। হালকা রঙের পোশাক সূর্যের তাপ প্রতিফলিত করে এবং গরম কম লাগে। বাইরে বের হলে সানগ্লাস, ছাতা বা হ্যাট ব্যবহার করুন। মেয়েরা চাইলে স্কার্ফ ব্যবহার করে চুল ও ত্বক রক্ষা করতে পারেন। শিশুদের ক্ষেত্রেও হালকা ও আরামদায়ক পোশাক বেছে নেওয়া উচিত। সুতি কাপড় ঘামের শোষণ করে এবং ত্বক শ্বাস নিতে পারে।
৩. খাবারে রাখুন ঠাণ্ডা ও পুষ্টিকর উপাদানঃ গরমে হজমের সমস্যা বেড়ে যায়, তাই মশলাদার ও তেলযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো। এর পরিবর্তে শসা, তরমুজ, তালশাঁস, লেবু, দই, পুদিনা ও মৌসুমি ফলমূল খাবারের তালিকায় রাখুন। এই খাবারগুলো শরীর ঠাণ্ডা রাখে এবং প্রয়োজনীয় পানি ও খনিজ সরবরাহ করে। প্যাকেটজাত ও ফাস্টফুড খাবার না খেয়ে ঘরে তৈরি হালকা খাবার গ্রহণ করুন। দুপুরের খাবারে টক দই, সালাদ ও লেবুর রস যুক্ত রাখতে পারেন। শরবত বা ফলের জুস (চিনি ছাড়া) পান করাও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।
৪. ঘর ঠাণ্ডা রাখার ঘরোয়া কৌশলঃ যাদের ঘরে এয়ার কন্ডিশনার নেই, তারা সহজ কিছু উপায় ব্যবহার করে ঘর ঠাণ্ডা রাখতে পারেন। জানালায় ভেজা পর্দা লাগিয়ে দিলে বাইরের গরম বাতাস ঠেকিয়ে ঘরের ভেতর ঠাণ্ডা পরিবেশ বজায় রাখা যায়। দিনে দুই-তিনবার মেঝেতে পানি ছিটিয়ে নিন, এতে বাতাস ঠাণ্ডা থাকে। ছোট একটি পাত্রে পানি রেখে তাতে তুলসী বা লেবুপাতা দিয়ে ঘরের কোণে রাখলে ঘ্রাণও ভালো থাকবে। চাইলে রাতে ঘুমানোর আগে মাথায় পানি ঢালতে পারেন এতে শরীরও ঠাণ্ডা হবে, ঘুমও ভালো হবে।
৫. বাড়তি সতর্কতা বয়স্ক ও শিশুদের জন্যঃ শিশু ও বয়স্কদের শরীর গরমে সহজেই দুর্বল হয়ে পড়ে, কারণ তাদের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সীমিত। তাদের দিনে একাধিকবার পানি বা তরল খাবার দিতে হবে। শিশুদের বাইরে খেলতে পাঠালে ছায়াযুক্ত বা শীতল পরিবেশে পাঠানো উচিত। বয়স্কদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে তাই দুপুরের সময় ঘরের বাইরে যাওয়া না করাই ভালো। হালকা খাবার খেতে দেওয়া, ঘর ঠাণ্ডা রাখা ও শরীরের তাপমাত্রা নিয়মিত পরিমাপ করা দরকার। প্রয়োজনে ওরস্যালাইন বা স্যালাইন পানি দিতে পারেন।
৬. প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর ঠাণ্ডা রাখুনঃ বাজারের কেমিক্যালযুক্ত কুলিং প্রোডাক্টের পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপায়েও শরীর ও ত্বককে ঠাণ্ডা রাখা যায়। যেমন মুলতানি মাটি, শসার রস বা দই দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ত্বকে প্রশান্তি আনে। এছাড়া ভেজানো পুদিনা পাতা বা তুলসীপাতা দিয়ে তৈরি চা শরীরকে ভিতর থেকে ঠাণ্ডা করে। চাইলে প্রতিদিন স্নানের আগে শরীরে নিমপাতার পানি ছিটিয়ে নিতে পারেন। তালের শাঁস, খেঁজুর ও ডাবের পানি স্বাভাবিকভাবে শরীর ঠাণ্ডা রাখে। নিয়মিত এসব প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করলে ওষুধ ছাড়াই সুস্থ থাকা সম্ভব।
এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো গ্রীষ্মের তীব্র গরমেও আপনাকে সুস্থ ও চনমনে রাখতে সাহায্য করবে। ঘরোয়া উপায়ে যত্ন নিন নিজের ও পরিবারের তবেই গরমকাল হবে নিরাপদ ও উপভোগ্য।