ঢাকা ০৭:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাছ কাটার ফল: উন্নয়ন কাজের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১০:৪২:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
  • / 53

ছবি সংগৃহীত

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ রক্ষার দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন ও প্রতিবাদ হয়ে আসছে। বিগত সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ওঠে—বিশেষ করে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং নির্বিচারে গাছ কাটার অভিযোগে প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান শিক্ষার্থীরা ও পরিবেশকর্মীরা।

সরকার বদলের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেও পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, গাছ কেটে ‘উন্নয়ন’ করার পুরনো ধারা থেকে এখনও বের হতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। পরিবেশবিধ্বংসী এই চিন্তাভাবনা বর্তমান প্রশাসনের কাছ থেকে আশানুরূপ নয়।

বিগত প্রশাসনের আমলে নেওয়া সহস্রাধিক কোটি টাকার একটি বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প এখনো চলমান, যার আওতায় ১২টি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। ইতোমধ্যে এক হাজারের বেশি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে এসব নির্মাণের জন্য। গাছ কাটার প্রতিবাদে বারবার আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা, তবে তাতে প্রশাসনের অবস্থানে কোনো বদল আসেনি।

নতুন প্রশাসন প্রথমবারের মতো আবারও গাছ কেটে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এবার টার্গেট করা হয়েছে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য নির্ধারিত একটি জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা। এর আগে একটি জলাশয় ভরাট করে এই ভবন নির্মাণের চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু পরিবেশবিদ ও শিক্ষার্থীদের আপত্তিতে সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়।

এই নতুন পরিকল্পনাতেও শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা বলছেন, যাঁরা আগে এই ধরনের গাছ কাটার বিরোধিতা করতেন, এখন দায়িত্বে এসে নিজেরাই সেই পথ অনুসরণ করছেন, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছেন, এই ভবন নির্মাণ হলে ওই জঙ্গলে বসবাসরত নানা প্রজাতির বন্য প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হবে। ওই অঞ্চলটি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী চলাচলের পথ হিসেবে পরিচিত, যা নষ্ট হলে প্রাণীকুল বিপদে পড়তে পারে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি (টিএমসি) এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে এমন জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে, যেখানে পরিবেশের তুলনামূলক কম ক্ষতি হবে।তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পরিবেশকর্মীরা বলছেন, উন্নয়ন হোক—তবে তা যেন প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষা করেই হয়। একটি সুপরিকল্পিত মহাপরিকল্পনা ছাড়া এভাবে গাছ কেটে বা পরিবেশ ধ্বংস করে ‘উন্নয়ন’ করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত একটি ক্যাম্পাস। একে ধ্বংস করে আমরা যে ক্ষতি করছি, তা হয়তো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে না। তাই আশাবাদ, বর্তমান প্রশাসন শিক্ষার্থী ও পরিবেশবিদদের উদ্বেগকে সম্মান জানাবে এবং পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনার পথে হাঁটবে। প্রকৃতির ওপর এমন চাপ আমরা আর দেখতে চাই না।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

গাছ কাটার ফল: উন্নয়ন কাজের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

আপডেট সময় ১০:৪২:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ রক্ষার দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন ও প্রতিবাদ হয়ে আসছে। বিগত সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ওঠে—বিশেষ করে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং নির্বিচারে গাছ কাটার অভিযোগে প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান শিক্ষার্থীরা ও পরিবেশকর্মীরা।

সরকার বদলের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেও পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, গাছ কেটে ‘উন্নয়ন’ করার পুরনো ধারা থেকে এখনও বের হতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। পরিবেশবিধ্বংসী এই চিন্তাভাবনা বর্তমান প্রশাসনের কাছ থেকে আশানুরূপ নয়।

বিগত প্রশাসনের আমলে নেওয়া সহস্রাধিক কোটি টাকার একটি বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প এখনো চলমান, যার আওতায় ১২টি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। ইতোমধ্যে এক হাজারের বেশি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে এসব নির্মাণের জন্য। গাছ কাটার প্রতিবাদে বারবার আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা, তবে তাতে প্রশাসনের অবস্থানে কোনো বদল আসেনি।

নতুন প্রশাসন প্রথমবারের মতো আবারও গাছ কেটে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এবার টার্গেট করা হয়েছে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য নির্ধারিত একটি জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা। এর আগে একটি জলাশয় ভরাট করে এই ভবন নির্মাণের চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু পরিবেশবিদ ও শিক্ষার্থীদের আপত্তিতে সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়।

এই নতুন পরিকল্পনাতেও শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা বলছেন, যাঁরা আগে এই ধরনের গাছ কাটার বিরোধিতা করতেন, এখন দায়িত্বে এসে নিজেরাই সেই পথ অনুসরণ করছেন, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছেন, এই ভবন নির্মাণ হলে ওই জঙ্গলে বসবাসরত নানা প্রজাতির বন্য প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হবে। ওই অঞ্চলটি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী চলাচলের পথ হিসেবে পরিচিত, যা নষ্ট হলে প্রাণীকুল বিপদে পড়তে পারে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি (টিএমসি) এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে এমন জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে, যেখানে পরিবেশের তুলনামূলক কম ক্ষতি হবে।তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পরিবেশকর্মীরা বলছেন, উন্নয়ন হোক—তবে তা যেন প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষা করেই হয়। একটি সুপরিকল্পিত মহাপরিকল্পনা ছাড়া এভাবে গাছ কেটে বা পরিবেশ ধ্বংস করে ‘উন্নয়ন’ করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত একটি ক্যাম্পাস। একে ধ্বংস করে আমরা যে ক্ষতি করছি, তা হয়তো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে না। তাই আশাবাদ, বর্তমান প্রশাসন শিক্ষার্থী ও পরিবেশবিদদের উদ্বেগকে সম্মান জানাবে এবং পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনার পথে হাঁটবে। প্রকৃতির ওপর এমন চাপ আমরা আর দেখতে চাই না।