তিস্তার ভাঙন রোধে চলছে জোর তৎপরতা, আশার আলো দেখছে তিস্তাপাড়ের মানুষ

- আপডেট সময় ০২:১১:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
- / 35
তিস্তা নদীর ভাঙনরোধে এবার দৃশ্যমান হয়েছে বাস্তব পদক্ষেপ। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, নদীতীরে চলছে হাজার হাজার জিও ব্যাগে বালু ভর্তি করার কাজ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেতৃত্বে এ কর্মযজ্ঞে কর্মব্যস্ত শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, অতীতে এ ধরনের প্রতিরোধমূলক কাজ না থাকায় প্রতিবছরই নদীগর্ভে হারিয়ে যেত ঘরবাড়ি। তবে এবারের উদ্যোগে নতুন করে আশায় বুক বাঁধছেন তারা। গতিয়াশামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ ও সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এবার মনে হয় নদী আর ভাইঙবার না। আল্লাহর রহমতে বাড়ি ঘর টিকবে।’
চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি রংপুরের কাউনিয়ায় অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রতিশ্রুতি দেন টেন্ডার হবে দ্রুত, কাজও শুরু হবে সময়মতো। তার সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মার্চেই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
এদিকে, নদী রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত তুহিন ওয়াদুদসহ একাধিক নদীকর্মী পূর্বেই এ বিষয়ে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে রিজওয়ানা হাসান প্রতিশ্রুতি দেন, এবং তা বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার আরিফ বলেন, ‘তিনি আমাদের যে কথা দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন দেখে আমরা কৃতজ্ঞ।’
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, তিস্তার দুই তীরজুড়ে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে ভাঙনপ্রবণ এলাকা রয়েছে ৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙনের ঝুঁকি থাকায় সেখানে কাজ চলছে পুরোদমে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুড়িগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব জানিয়েছেন, ‘আগামী জুনের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।’
তবে তিস্তা নদীর স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘তিস্তার ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী কাজ যতই হোক, টেকসই সমাধানের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন জরুরি।’
২০১৬ সালে মহাপরিকল্পনার ঘোষণা দেওয়া হলেও এতদিন তা বাস্তব রূপ পায়নি। তবে এবারের কাজ দেখে এলাকাবাসীর মাঝে তৈরি হয়েছে ভরসা এই বর্ষায় হয়তো তিস্তা আর কাউকে ভাসাবে না।