শিক্ষাবর্ষের দুই মাস: প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এখনও ছাপা হয়নি সাত কোটি বই
শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও দেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে এখনো সব পাঠ্যবই পৌঁছেনি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় সাত কোটি বই ছাপা বাকি, যার বেশিরভাগই মাধ্যমিক স্তরের।
নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই পরিমার্জনের কারণে কিছুটা দেরির আশঙ্কা ছিল, তবে বাস্তবে বিলম্ব আরও দীর্ঘ হচ্ছে। ছাপার ধীরগতি ও সরবরাহজনিত জটিলতার কারণে মার্চের মাঝামাঝি সময়ের আগে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এনসিটিবির হিসাব অনুযায়ী, চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৪০ কোটি ১৫ লাখ বই ছাপানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে পরে সংশোধিত চাহিদা অনুযায়ী মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৯ কোটি ৬০ লাখ। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের জন্য ৩০ কোটি ৫০ লাখ বই প্রয়োজন হলেও এখনো প্রায় ১১ কোটি ৭৫ লাখ বই সরবরাহ হয়নি।
ছাপার পর বই মান যাচাই, বাঁধাই ও সরবরাহ প্রক্রিয়ার কারণে দেরি হচ্ছে বলে জানান এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কাগজ ও আর্ট কার্ড সংকটও ছাপার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজধানী ও জেলা শহরের বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির অনেক বিষয়ের বই এখনো পৌঁছেনি। অনেক শিক্ষক এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে পিডিএফ ডাউনলোড করে পড়ানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু সব শিক্ষার্থীর কাছে ডিজিটাল ডিভাইস না থাকায় পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।
জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য বলছে, নবম শ্রেণির বইয়ের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। চাহিদা অনুযায়ী প্রায় ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩২২ কপি বই প্রয়োজন থাকলেও এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৫৫৪টি।
এনসিটিবির এক কর্মকর্তা জানান, বই ছাপার ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি ও গণিতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য দশম শ্রেণির বইও প্রায় সরবরাহ শেষ। এখন নবম শ্রেণিসহ অন্যান্য শ্রেণির অবশিষ্ট বই ছাপায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বই ছাপার কাজ পাওয়া এক মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক জানান, কাগজের সংকটের কারণে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত সব বই সরবরাহ সম্পন্ন হতে পারে। তবে এতদিনে শিক্ষার্থীদের যে শিক্ষাজট তৈরি হবে, তা কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না।