প্রলোভনে হারাচ্ছে উর্বর জমি, গাইবান্ধায় বাড়ছে তামাকের বিষাক্ত ছোবল

- আপডেট সময় ১২:৫৫:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
- / 31
বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলোর চতুর প্রলোভনে গাইবান্ধার কৃষকেরা দিন দিন রবি ফসল ও সবজি চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বেশি মুনাফার লোভে তারা ঝুঁকছেন ক্ষতিকর তামাক চাষে। ফলে একদিকে যেমন কমছে খাদ্য উৎপাদন, অন্যদিকে নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমির উর্বরতা; হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য।
সরেজমিনে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর, তালুক রহিমাপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ সবুজ তামাকের আবাদে ভরে উঠেছে। কৃষকেরা কেউ ব্যস্ত পরিচর্যায়, কেউ আবার তুলছেন পরিপক্ব তামাকপাতা। যেখানে গত বছরও মাঠজুড়ে চাষ হয়েছিল আলু, ভুট্টা, সরিষা, গমের মতো রবি ফসল, আজ সেসব জমিতে শুধুই তামাক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কৃষকদের আগাম অর্থ, বীজ, সার, কীটনাশকসহ নানা সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো এই চাষে উৎসাহিত করছে। বেশি লাভের আশায় কৃষকেরাও এসব সুযোগ গ্রহণ করে ফসলের জমিতে বাড়াচ্ছেন তামাকের বিস্তার। তবে এভাবে তামাক চাষে জমির উর্বরতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে এবং সৃষ্টি হচ্ছে পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি।
বিশ্বনাথপুর গ্রামের তামাকচাষি জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘তামাক থেকে যে ক্ষতি হয়, তা আমরা ভালো করে বুঝি না। তবে লাভের পরিমাণ বেশি হওয়ায় তামাক চাষে ঝুঁকেছি।’
অন্যদিকে, স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুর ইসলামের অভিযোগ, ‘প্রতি বছর ফসলি জমি নষ্ট করে কৃষকেরা তামাক চাষ করলেও কৃষি বিভাগ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে এই বিষাক্ত ফসলের আবাদ।’
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম জানান, ‘কোম্পানিগুলোর নানা প্রলোভনের কারণে কৃষকেরা আগ্রহী হচ্ছেন তামাক চাষে। তবে কৃষকদের সচেতন করতে আমরা নিয়মিত মাঠপর্যায়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’
সরকারের কঠোর নির্দেশনার পরও বাস্তবে তামাক চাষ কমার বদলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গাইবান্ধায় প্রায় ২৬ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, বাস্তবে এ পরিমাণ কয়েক গুণ বেশি। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।