কানাডার পাল্টা শুল্কের সিদ্ধান্ত, বৈশ্বিক বাণিজ্যে কেমন পরিবর্তন আনবে?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মাসের সময়সীমার মধ্যে মেক্সিকো ও কানাডা থেকে কোনো সমাধান না আসায়, মঙ্গলবার থেকেই শুরু হলো নতুন শুল্ক যুদ্ধ। ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডার সব পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে কানাডা নিজেদের পণ্যে একই হারে শুল্ক আরোপ করেছে।
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ওয়ারেন বাফেটসহ একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি আরেকটি বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা যে বাড়ছিল, তা চীনের ওপর শুল্ক আরোপের মধ্য দিয়ে প্রথম থেকেই শুরু হয়েছিল। মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক আরোপের মাধ্যমে সেই চক্র আরো পূর্ণ হলো।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ৩০ বিলিয়ন কানাডীয় ডলারের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। ১২৫ বিলিয়ন কানাডীয় ডলারের অন্যান্য পণ্যের ওপর শুল্ক কার্যকর হবে আগামী ২৫ মার্চ থেকে। মেক্সিকোও পিছিয়ে নেই; তাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের প্রেক্ষিতে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শিনবাম জানিয়েছেন, মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক কার্যকর হচ্ছে মঙ্গলবার থেকেই।
তবে চীনের পাল্টা ব্যবস্থা বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও বড় প্রভাব ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছে, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় মুরগির মাংস, গরুর মাংস, ভুট্টা, সামুদ্রিক খাবারসহ একাধিক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। এছাড়া ১০টি মার্কিন কোম্পানিকে আন-রিলায়েবল (নির্ভরযোগ্য নয়) তালিকায় পাঠানোর পাশাপাশি ১৫টি কোম্পানির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নও ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। সম্প্রতি ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চাপে ফেলার অভিযোগ করেন এবং তাদের ওপরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, দাবি করেছে, এমন অন্যায্য পদক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না এবং পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুল্ক যুদ্ধের এই ধারা চলতে থাকলে, বিশ্ব অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেতে পারে, এবং আর্থিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে। বিশ্বব্যাপী কাঁচামালের দাম বাড়তে থাকলে, বেশ কিছু দেশের অর্থনীতি চাপে পড়বে।