সূর্যমুখীর হাসিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষকের সমৃদ্ধির স্বপ্ন, ৯৭ মেট্রিক টন তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষকদের মুখে এখন হাসি ফুটিয়েছে সূর্যমুখী চাষ। জেলার বিস্তীর্ণ মাঠে হলুদ গালিচার মতো প্রসারিত সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য যেমন মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদের, তেমনই আশার আলো দেখাচ্ছে কৃষকদেরও।
গত এক দশক ধরে জেলার কৃষকরা সূর্যমুখী চাষ করে আসছেন। চলতি মৌসুমে ১০০ হেক্টর জমিতে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ৫৫ হেক্টরে চাষ হয়েছে, যেখানে উৎপাদন হবে প্রায় ৯৭ মেট্রিক টন সূর্যমুখী তেল।
শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিন সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ ভিড় করছেন এই মনোমুগ্ধকর ফুলের বাগানে। কেউ সেলফি তুলছেন, কেউ পরিবার নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন, আবার কেউ মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছেন প্রকৃতির রঙিন দৃশ্য।
কৃষকের সাফল্যের গল্প
রসুলপুর গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদিন জানালেন, তিন বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। খরচ তুলনামূলক কম এবং তেল উৎপাদন ভালো হওয়ায় তিনি আশাবাদী, লাভজনক ফল পাবেন।
পৌর এলাকার ভাদুঘরের চাষি শাহানুর ভূঁইয়া আগে বিভিন্ন সবজি চাষ করতেন। কিন্তু ধান ও সবজির বাজারমূল্য কমে যাওয়ায় এখন সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তিনি মনে করেন, এই ফসল অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে।
বুধল ইউনিয়নের চান্দিয়ারা গ্রামের নূরু মিয়া এ বছরই প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী চাষ করেছেন। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বিনামূল্যে বীজ ও সার পাওয়ায় তার চাষে খরচও কম হয়েছে।
ভোজ্য তেলের নতুন সম্ভাবনা
সূর্যমুখী তেল পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর। স্থানীয় কৃষি বিভাগ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করছে। জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুনসী তোফায়েল হোসেন জানান, সূর্যমুখী চাষ মাটির উর্বরতা বাড়ায় ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। ভোজ্য তেলের ঘাটতি মেটাতে ভবিষ্যতে উন্নত জাতের সূর্যমুখী চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সূর্যমুখী চাষ শুধু কৃষকদের আয় বৃদ্ধিই করছে না, ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে। কৃষকরা এখন স্বপ্ন দেখছেন আরও বড় পরিসরে এই ফসল চাষের, যা ভবিষ্যতে আরও নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে।