ঢাকা ০১:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলে আহত অন্তত ৩০ জন, শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা আলোচনা শুরু: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিতর্ক ইরান-ইসরাইল সংঘাতে অস্থির ক্রিপ্টোবাজার, কমেছে বিটকয়েন-ইথারের দাম শেষ মুহূর্তের পেনাল্টি মিসে রিয়ালের হতাশা, আল-হিলালের সঙ্গে ড্র ড. শামসুল আলম গ্রেফতার: মোহাম্মদপুরে ডিবি’র অভিযানে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আটক হোয়াইট হাউসের সামনে গাজা ও ইরানে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সবার নজর ইরানে, গাজায় ২৪ ঘণ্টায় নিহত ১৪০: ত্রাণের অপেক্ষায় ঝরলো প্রাণ ইরানে ইসরাইলি হামলা ‘মানবতার বিরুদ্ধে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ’: উত্তর কোরিয়া গাজায় আরও রক্তস্নান: একদিনেই ১৪৪ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি পল্টনে ডিবি পুলিশের ওপর মাদক কারবারিদের গুলি, আহত ২ সদস্য

হাওরের বজ্রবৃষ্টিতে একাধিক মৃত্যু, বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৩:২০:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • / 20

ছবি: সংগৃহীত

হাওর অঞ্চলের মানুষের একমাত্র অবলম্বন একফসলী বোরো ধান। এই ধানেই তাদের জীবিকা, আশা-ভরসা, ভালোবাসা। আর সেই ধান এখন মাঠে পেকে উঠেছে। ফলনও ভালো হয়েছে—চোখেমুখে আনন্দ, মন ভরে গেছে কৃষক-কৃষাণীর। তাই গরম রোদ উপেক্ষা করেই চলছে কাটা, মাড়াই আর শুকানোর ব্যস্ততা। কিন্তু সেই আনন্দে ভাঙন ধরিয়েছে আকস্মিক বৃষ্টি আর মৃত্যুঝরানো বজ্রপাত।

গত এক সপ্তাহ ধরে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় বৃষ্টি ও বজ্রপাত লেগেই আছে। এতে ধান শুকানো যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি বজ্রপাতে প্রাণও ঝরছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দশ দিনে বজ্রপাতে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ফলে হাওরে প্রবেশ করতেই কৃষক-শ্রমিকদের পরিবারে দেখা দিয়েছে অজানা আতঙ্ক।

শুধু বজ্রপাত নয়, আশঙ্কার তালিকায় রয়েছে ফসল রক্ষা বাঁধও। কৃষকদের অভিযোগ, নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ বছরও বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বরং শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে নির্মিত বাঁধগুলো হয়েছে দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ। এতে পাহাড়ি ঢল নামলে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্বম্ভরপুরের আঙ্গারউলী হাওরের কৃষক শাকিল মিয়া বলেন, “হাওরে ভালো ঝাঙ্গাল নেই, চলাচল খুবই কষ্টকর। বৃষ্টি হলে ধান কেটে আনা কঠিন হয়ে পড়ে। আর বজ্রপাত হলে শ্রমিকরাও আর মাঠে যেতে চান না। এমন যদি চলতেই থাকে, তাহলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।”

একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করেন শনির হাওরের কৃষক রফিক মিয়াও। তিনি বলেন, “আকাশে রোদ থাকলে কাজ করতে স্বস্তি লাগে। কিন্তু বৃষ্টি ও বজ্রপাত হলে মাঠে যাওয়া সম্ভব হয় না। ধান তো ঘরে তুলতে পারিনি এখনো।”

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রাজু আহমদ বলেন, “আগে বজ্রপাতের পরিমাণ এতটা ছিল না। এখন প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক। সরকারিভাবে বজ্রপাত প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।”

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার দাবি করেন, “বাঁধ সুরক্ষিত আছে। কোনো সমস্যা হবে না বলে আশা করছি। তবে হাওরে কাজ করতে গিয়ে কৃষক-শ্রমিকদের অবশ্যই নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।”

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল আজাদ জানান, “আমরা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে পুরোদমে ধান কাটা চলছে। তবে বজ্রপাতের ঝুঁকি থাকায় সবাইকে সাবধান হয়ে কাজ করতে বলছি।”

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, “বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন হাওরে সরকারি প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ১০-১২টি নিরাপদ শেড নির্মাণ করা হয়েছে। আরও নির্মাণ হবে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

হাওরের বজ্রবৃষ্টিতে একাধিক মৃত্যু, বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা

আপডেট সময় ০৩:২০:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

হাওর অঞ্চলের মানুষের একমাত্র অবলম্বন একফসলী বোরো ধান। এই ধানেই তাদের জীবিকা, আশা-ভরসা, ভালোবাসা। আর সেই ধান এখন মাঠে পেকে উঠেছে। ফলনও ভালো হয়েছে—চোখেমুখে আনন্দ, মন ভরে গেছে কৃষক-কৃষাণীর। তাই গরম রোদ উপেক্ষা করেই চলছে কাটা, মাড়াই আর শুকানোর ব্যস্ততা। কিন্তু সেই আনন্দে ভাঙন ধরিয়েছে আকস্মিক বৃষ্টি আর মৃত্যুঝরানো বজ্রপাত।

গত এক সপ্তাহ ধরে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় বৃষ্টি ও বজ্রপাত লেগেই আছে। এতে ধান শুকানো যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি বজ্রপাতে প্রাণও ঝরছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দশ দিনে বজ্রপাতে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ফলে হাওরে প্রবেশ করতেই কৃষক-শ্রমিকদের পরিবারে দেখা দিয়েছে অজানা আতঙ্ক।

শুধু বজ্রপাত নয়, আশঙ্কার তালিকায় রয়েছে ফসল রক্ষা বাঁধও। কৃষকদের অভিযোগ, নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ বছরও বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বরং শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে নির্মিত বাঁধগুলো হয়েছে দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ। এতে পাহাড়ি ঢল নামলে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্বম্ভরপুরের আঙ্গারউলী হাওরের কৃষক শাকিল মিয়া বলেন, “হাওরে ভালো ঝাঙ্গাল নেই, চলাচল খুবই কষ্টকর। বৃষ্টি হলে ধান কেটে আনা কঠিন হয়ে পড়ে। আর বজ্রপাত হলে শ্রমিকরাও আর মাঠে যেতে চান না। এমন যদি চলতেই থাকে, তাহলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।”

একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করেন শনির হাওরের কৃষক রফিক মিয়াও। তিনি বলেন, “আকাশে রোদ থাকলে কাজ করতে স্বস্তি লাগে। কিন্তু বৃষ্টি ও বজ্রপাত হলে মাঠে যাওয়া সম্ভব হয় না। ধান তো ঘরে তুলতে পারিনি এখনো।”

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রাজু আহমদ বলেন, “আগে বজ্রপাতের পরিমাণ এতটা ছিল না। এখন প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক। সরকারিভাবে বজ্রপাত প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।”

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার দাবি করেন, “বাঁধ সুরক্ষিত আছে। কোনো সমস্যা হবে না বলে আশা করছি। তবে হাওরে কাজ করতে গিয়ে কৃষক-শ্রমিকদের অবশ্যই নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।”

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল আজাদ জানান, “আমরা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে পুরোদমে ধান কাটা চলছে। তবে বজ্রপাতের ঝুঁকি থাকায় সবাইকে সাবধান হয়ে কাজ করতে বলছি।”

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, “বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন হাওরে সরকারি প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ১০-১২টি নিরাপদ শেড নির্মাণ করা হয়েছে। আরও নির্মাণ হবে।”