চলনবিল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নতুন আশা দেখাচ্ছে
এবছর চলনবিলে সরিষা ও মধুর উৎপাদনে বিপ্লবের সম্ভাবনা
পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত দেশের বৃহত্তম বিল, চলনবিল। যা এবছর সরিষা ও মধু উৎপাদনে এক নতুন বিপ্লবের সাক্ষী হতে চলেছে। এই অঞ্চলের বিশাল চরের জমিগুলোতে এবার সরিষা ও মধু ও উৎপাদনের রেকর্ড সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি রবি মৌসুমে চলনবিলের বিভিন্ন অঞ্চলে সরিষা চাষে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে। এ মৌসুমে চলনবিলে প্রায় ২ লাখ ১ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে আগাম ও নবী জাতের সরিষার আবাদ করা হয়েছে। পাবনায় ৪৪ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। নাটোর জেলায় ৯ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। নওগাঁয় ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর এবং সিরাজগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ৮৭ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকারি তথ্যমতে, দেশের বিভিন্ন জেলার চাষিদের জন্য উন্নতমানের সরিষার বীজ এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে চাষিরা দুই ধরনের সরিষা দেশি ও হাইব্রিড আবাদ করতে সক্ষম হয়েছেন। এ ছাড়া ৪৬০টি সেচ পাম্প স্থাপনের মাধ্যমে কৃষির অবকাঠামো উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। এবার সরিষার মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৪৬০ টন। যার বর্তমান বাজার মূল্য হতে পারে প্রায় ১৪১ কোটি টাকা। সরকার আশা করছে, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে সরিষার তেল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলনবিলে মৌমাছির উপস্থিতি সরিষার পরাগায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, যা সরিষার ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াচ্ছে।
সরিষা চাষে বারি-১৪ জাতের বীজ ব্যবহার করা হচ্ছে, যা মৌমাছির পরাগায়নের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এর ফলে একদিকে সরিষার ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গোটা চলনবিল এখন মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত। মধু উৎপাদনে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে। মৌচাষীরা বলছেন, চলতি মৌসুমে চলনবিলে ২৫ লাখ কেজি মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হতে পারে। প্রতি কেজি মধুর বাজার মূল্য ৪০০ টাকা ধরে হিসাব করলে, এর মোট বাজার মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এই বিপুল সম্ভাবনা মৌচাষীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা জাগিয়ে তুলেছে এবং চলনবিলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নতুন আশা দেখাচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকদের মতে, এই মধু চাষ এবং সরিষার আবাদ তাদের জীবিকা উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখছে। শুধু তাই নয়, এটি পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থার এক অসাধারণ উদাহরণ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং বাস্তুতন্ত্রের উন্নয়নে এই উদ্যোগ ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সরিষার পাশাপাশি মৌমাছি চাষের এই সমন্বিত প্রচেষ্টা শুধু চলনবিল অঞ্চল নয়, দেশের অন্যান্য এলাকাগুলোর জন্যও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এই উদ্ভাবনী পদ্ধতি পুরো দেশের কৃষি অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।