ডিসেম্বরে রেকর্ড প্রবাসী আয়: দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি
ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই মাসে প্রবাসী আয় রেকর্ড ২৬৪ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ডলারের রেকর্ড স্থাপন হয়েছিল। এ বছরের ডিসেম্বরে সেই রেকর্ড ভেঙে প্রবাসী আয় নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে প্রবাসী আয়ের ধারা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। আগস্ট থেকে প্রতি মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি আয় হয়েছে। তবে ডিসেম্বরে সেই ধারা ভেঙে একটি উল্লেখযোগ্য রেকর্ড তৈরি হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় ছিল ১৯৯ কোটি ডলার, যেখানে এ বছরের ডিসেম্বরে তা বেড়ে ২৬৪ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা ৩২.৫৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে। বিদায়ী বছরের তুলনায় এ বছরের প্রবাসী আয় প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি। নভেম্বর মাসেও প্রবাসী আয়ের উর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে প্রবাসী আয় ছিল ২২০ কোটি ডলার, যা ২০২৩ সালের নভেম্বরে পাওয়া ১৯৩ কোটি ডলারের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি।
প্রবাসী আয়ের এই বৃদ্ধি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ ২ হাজার ৬৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এছাড়া, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ৫০ কোটি ডলারের ঋণ যোগ হওয়ায় রিজার্ভ আরো শক্তিশালী হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। গত পাঁচ মাসে ৩৩০ কোটি ডলারের মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ শোধ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৫০ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে সরকারি ব্যাংকগুলো। তবে এখনো ৪০ কোটি ডলারের বকেয়া রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর প্রবাসীরা দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছেন। এতে অর্থ পাচার এবং হুন্ডি ব্যবসা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে, যা রেকর্ড প্রবাসী আয়ের অন্যতম কারণ।
প্রবাসী আয়ের এই অগ্রগতি দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করেছে। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি রিজার্ভ শক্তিশালী হওয়ায় দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, প্রবাসী আয়ের এই ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।