খুনের দায়ে গ্ৰেফতার দুইবন্ধু

- আপডেট সময় ০৩:৫৫:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫
- / 10
শ্বাসরোধ করে হত্যার পর বন্যার পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয় জিহাদের লাশ
নাটোরের সিংড়ায় ভ্যানচালক মো. জিহাদ (২০) নামের এক যুবককে খুনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই এর উন্মোচন করেছে র্যাব-৫। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন আলামত এবং ছিনতাই হওয়া ভ্যান।
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার দুজন হলো- নাটোরের সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ইউনিয়নের বড়িয়া গ্রামের মো. সাগর প্রামাণিক (১৮) এবং মো. সুলতান প্রামাণিক (১৯)। তারা দুই বন্ধু। খুন হওয়া জিহাদও তাদের বন্ধু।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহীতে র্যাব-৫ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ।
তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় সিংড়ার ইটালি ইউনিয়নের কলেজপাড়া এলাকার চলনবিলে এক যুবকের লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা র্যাব ও পুলিশে খবর দেন। পরে সিংড়া থানা-পুলিশ ও র্যাব-৫ এর একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে মুখ বাঁধা লাশটি উদ্ধার করে। পরে তা ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
পরিচয় শনাক্তের পর জানা যায়, নিহত ব্যক্তির নাম জিহাদ, তিনি ভ্যানচালক। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে র্যাব-৫ একটি বিশেষ গোয়েন্দা দল তদন্তে নামে। তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত সময়ের মধ্যেই জড়িতদের শনাক্ত করে তারা। শুক্রবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় চৌগ্রাম ইউনিয়নের বড়িয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাগর ও সুলতানকে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুই কিশোর বন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং ঘটনার নেপথ্যে উঠে আসে এক করুণ বাস্তবতা। তারা জানায়, চার মাস আগে জিহাদের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এরপর থেকে তারা প্রায়ই একসাথে ঘোরাঘুরি ও মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়ে।
সাগর জানায়, তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। চিকিৎসা ও সংসারের খরচ জোগাতে সে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছিল। সুলতানও দীর্ঘদিন ধরে বেকার ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিল। এই পরিস্থিতিতে তারা সহজ-সরল বন্ধু জিহাদের ব্যাটারিচালিত ভ্যান ছিনিয়ে নিতে পরিকল্পনা করে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ৩০ জুলাই সন্ধ্যায় চৌগ্রাম বাজারে দেখা করে তারা। আড্ডার ছলে সিংড়া বাজার থেকে কিছু ঘুমের ওষুধ সংগ্রহ করে তা একটি কোমল পানীয়র বোতলে মিশিয়ে রাখে। পরে ঘোরাঘুরির কথা বলে জিহাদকে তার ভ্যানে উঠিয়ে চলনবিলের দিকে নিয়ে যায়। পথে কোমল পানীয় খাইয়ে দেয় তাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জিহাদ অচেতন হয়ে পড়ে।
রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে ইটালি ইউনিয়নের সাতপুকুরিয়া বাজারসংলগ্ন একটি নির্জন জায়গায় তারা ভ্যান থামায়। সেখানে অচেতন জিহাদকে গলা টিউব পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে গামছা দিয়ে মুখ শক্ত করে বেঁধে তাকে বন্যার পানিতে ফেলে দেয়।
হত্যাকাণ্ডের পর সুলতান নিহতের মোবাইল ফোন নিজের কাছে রেখে দেয় এবং সাগর ভ্যানটি বিক্রির উদ্দেশ্যে ইটালি গ্রামের এক মেকারের বাসায় রেখে আসে। র্যাব-৫ তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই ভ্যান, মোবাইল ফোন এবং হত্যায় ব্যবহৃত টিউব উদ্ধার করেছে।
র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ জানান, গ্রেপ্তার দুজনকে সিংড়া থানায় হস্তান্তর করা হবে। পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠাবে।