শুধু জন্মগত নারীরাই প্রকৃত নারী, রূপান্তরিতরা নয়: যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের রায়

- আপডেট সময় ০২:৫০:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
- / 46
যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের এক ঐতিহাসিক রায়ে বলা হয়েছে, সমতা আইনের আওতায় “নারী” বলতে বোঝানো হবে শুধুমাত্র জন্মগতভাবে নারীদেরই। অর্থাৎ, যাঁরা জৈবিকভাবে নারী হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছেন, তারাই কেবল নারী হিসেবে আইনি সুরক্ষা পাবেন। এই রায়ে ট্রান্সজেন্ডার বা লিঙ্গ রূপান্তরকারী নারীদের নারীর আইনি পরিচয় থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার দেওয়া সর্বসম্মত এই রায় দীর্ঘদিন ধরে চলা একটি বিতর্কের অবসান ঘটাল। স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও ওয়েলস—এই তিন অংশেই লিঙ্গভিত্তিক অধিকার ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্কটল্যান্ড সরকারের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয় নারী অধিকার সংগঠন ‘ফর উইমেন স্কটল্যান্ড’। তাদের দাবি ছিল, নারীর সংজ্ঞা জৈবিকভাবে নির্ধারিত হওয়া উচিত এবং লিঙ্গভিত্তিক আইনি সুরক্ষাও কেবলমাত্র জন্মগত নারীদের জন্য প্রযোজ্য হওয়া উচিত। সুপ্রিম কোর্ট তাদের দাবিকে সমর্থন করেছে।
তবে রায় ঘোষণার সময় বিচারক লর্ড হজ বলেন, “এই রায়কে কোনো পক্ষের জয় বা পরাজয় হিসেবে দেখা ঠিক হবে না।” তিনি স্পষ্ট করে দেন, যদিও নারী শব্দটি এখানে জন্মগত নারীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে, তবুও ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরাও বৈষম্য থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রাখেন।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্যের ‘জেন্ডার রিকগনিশন সার্টিফিকেট’ (GRC) থাকলেই কেউ আইনিভাবে তার লিঙ্গ পরিবর্তন করেছেন বলে বিবেচিত হন। স্কটল্যান্ড সরকার দাবি করেছিল, এই সনদধারীরা সমতা আইনের আওতায় জন্মগত নারীদের মতো সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী। তবে আদালতের মতে, ২০১০ সালের সমতা আইনে ‘নারী’ শব্দটি শুধুমাত্র জৈবিক নারী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।
‘ফর উইমেন স্কটল্যান্ড’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা সুসান স্মিথ এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আমরা বরাবরই বিশ্বাস করে এসেছি যে নারীদের সুরক্ষা তাদের জন্মগত পরিচয়ের ভিত্তিতেই হওয়া উচিত। আজকের রায়ে সেটিই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
রায়ের ফলে যুক্তরাজ্যে ভবিষ্যতে নারী-নির্দিষ্ট পরিষেবা, নিরাপদ স্থান ও সুযোগ-সুবিধা শুধুমাত্র জন্মগত নারীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে, যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা বিতর্ক ছিল। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার জন সুইনি জানিয়েছেন, সরকার এই রায় মেনে নিয়েছে।
এই রায় যুক্তরাজ্যের সমতা আইন ও লিঙ্গ রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায় সূচিত করল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।