ঢাকা ০১:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনের সামনে ফের অবস্থান সমর্থকদের বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের বৈঠক জোরপূর্বক গুম নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে আইন উপদেষ্টা শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক একীভূত হচ্ছে, প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে: গভর্নর জাতীয় সনদের লক্ষ্যে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু মঙ্গলবার দুর্বল শরীরকে শক্তিশালী করতে যে সকল পুষ্টিকর খাবার খাবেন ঈদের ছুটিতেও সচল মোংলা বন্দর, ২ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি-রপ্তানি সরকারি দামে অনীহা ট্যানারির, চামড়া নিয়ে বিপাকে ব্যবসায়ীরা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনিকে হত্যার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ট্রাম্পের: মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি

লিচুর রাজ্যে বিপর্যয়: ঈশ্বরদীর বাগানগুলোতে মুকুল সংকট, চাষিরা উদ্বিগ্ন

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০১:২৯:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
  • / 48

ছবি সংগৃহীত

 

ফাল্গুন এলেই ঈশ্বরদীর বাতাসে লিচুর মুকুলের মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে পড়ে। শত শত বাগান হলুদাভ মুকুলে ছেয়ে যায়, আর চাষিদের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে আশার আলো। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। লিচু গাছে মুকুল নেই বললেই চলে, সেই চিরচেনা সুবাসও উধাও। ফলে চাষি, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট।

ঈশ্বরদী দেশের অন্যতম প্রধান লিচু উৎপাদন অঞ্চল। প্রতিবছর এখানে ৪৫০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার লিচু উৎপাদিত হয়। লক্ষাধিক মানুষ এ চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তবে এবার অস্বাভাবিকভাবে মুকুল কম এসেছে, যা ফলন বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈরী আবহাওয়া বিশেষ করে অনিয়মিত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কারণে মুকুল ধরা কমেছে।

উপজেলার মানিকনগর, মিরকামারী, কদিমপাড়া, চরমিরকামারী ও আওতাপাড়ার বাগানগুলো ঘুরে দেখা যায়, যেখানে মুকুলে ছেয়ে থাকার কথা, সেখানে নতুন পাতার আধিক্য। গাছে নতুন পাতা বের হলে মুকুল আসার সম্ভাবনা কমে যায়। চাষিরা বলছেন, সাধারণত ১০০টি গাছের মধ্যে ৯০-৯৫টিতে মুকুল আসে, কিন্তু এবার মাত্র ১০-২০টি গাছে মুকুল দেখা গেছে, তাও খুবই কম পরিমাণে।

জাতীয় পদকপ্রাপ্ত লিচু চাষি আব্দুল জলিল কিতাব (লিচু কিতাব) বলেন, ‘৪৫ বছর ধরে লিচু চাষ করছি, এমন পরিস্থিতি কখনো দেখিনি। শুধু ঈশ্বরদী নয়, সারাদেশেই লিচুর মুকুল কম এসেছে। প্রধান কারণ বৈরী আবহাওয়া। এই অবস্থার উন্নতি না হলে আগামীতে লিচু উৎপাদন সংকটে পড়বে। এ বছর হয়তো ১০ শতাংশ ফলনও পাওয়া যাবে না, ফলে লক্ষাধিক মানুষ সংকটে পড়বে। সরকার এখনই উদ্যোগ না নিলে আগামী পাঁচ বছরে লিচু চাষ হুমকির মুখে পড়বে।’

কৃষি বিভাগের প্রতিক্রিয়া

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ‘এ বছরও ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে, তবে মুকুলের পরিমাণ কম। আবহাওয়ার প্রভাবেই এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কিছু গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে, আমরা চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছি যাতে যতটুকু মুকুল এসেছে তা রক্ষা করা যায়।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস বলেন, ‘লিচুর মুকুল কম আসায় চাষিরা হতাশ। কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সহায়তা করতে বলা হয়েছে, যাতে বিদ্যমান মুকুল ধরে রাখা যায়।’

লিচুর এ বিপর্যয় শুধু চাষিদের নয়, পুরো এলাকার অর্থনীতির জন্যই অশনিসংকেত। সংকট মোকাবিলায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ঈশ্বরদীর লিচু চাষ ভবিষ্যতে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

লিচুর রাজ্যে বিপর্যয়: ঈশ্বরদীর বাগানগুলোতে মুকুল সংকট, চাষিরা উদ্বিগ্ন

আপডেট সময় ০১:২৯:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

 

ফাল্গুন এলেই ঈশ্বরদীর বাতাসে লিচুর মুকুলের মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে পড়ে। শত শত বাগান হলুদাভ মুকুলে ছেয়ে যায়, আর চাষিদের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে আশার আলো। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। লিচু গাছে মুকুল নেই বললেই চলে, সেই চিরচেনা সুবাসও উধাও। ফলে চাষি, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট।

ঈশ্বরদী দেশের অন্যতম প্রধান লিচু উৎপাদন অঞ্চল। প্রতিবছর এখানে ৪৫০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার লিচু উৎপাদিত হয়। লক্ষাধিক মানুষ এ চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তবে এবার অস্বাভাবিকভাবে মুকুল কম এসেছে, যা ফলন বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈরী আবহাওয়া বিশেষ করে অনিয়মিত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কারণে মুকুল ধরা কমেছে।

উপজেলার মানিকনগর, মিরকামারী, কদিমপাড়া, চরমিরকামারী ও আওতাপাড়ার বাগানগুলো ঘুরে দেখা যায়, যেখানে মুকুলে ছেয়ে থাকার কথা, সেখানে নতুন পাতার আধিক্য। গাছে নতুন পাতা বের হলে মুকুল আসার সম্ভাবনা কমে যায়। চাষিরা বলছেন, সাধারণত ১০০টি গাছের মধ্যে ৯০-৯৫টিতে মুকুল আসে, কিন্তু এবার মাত্র ১০-২০টি গাছে মুকুল দেখা গেছে, তাও খুবই কম পরিমাণে।

জাতীয় পদকপ্রাপ্ত লিচু চাষি আব্দুল জলিল কিতাব (লিচু কিতাব) বলেন, ‘৪৫ বছর ধরে লিচু চাষ করছি, এমন পরিস্থিতি কখনো দেখিনি। শুধু ঈশ্বরদী নয়, সারাদেশেই লিচুর মুকুল কম এসেছে। প্রধান কারণ বৈরী আবহাওয়া। এই অবস্থার উন্নতি না হলে আগামীতে লিচু উৎপাদন সংকটে পড়বে। এ বছর হয়তো ১০ শতাংশ ফলনও পাওয়া যাবে না, ফলে লক্ষাধিক মানুষ সংকটে পড়বে। সরকার এখনই উদ্যোগ না নিলে আগামী পাঁচ বছরে লিচু চাষ হুমকির মুখে পড়বে।’

কৃষি বিভাগের প্রতিক্রিয়া

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ‘এ বছরও ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে, তবে মুকুলের পরিমাণ কম। আবহাওয়ার প্রভাবেই এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কিছু গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে, আমরা চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছি যাতে যতটুকু মুকুল এসেছে তা রক্ষা করা যায়।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস বলেন, ‘লিচুর মুকুল কম আসায় চাষিরা হতাশ। কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সহায়তা করতে বলা হয়েছে, যাতে বিদ্যমান মুকুল ধরে রাখা যায়।’

লিচুর এ বিপর্যয় শুধু চাষিদের নয়, পুরো এলাকার অর্থনীতির জন্যই অশনিসংকেত। সংকট মোকাবিলায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ঈশ্বরদীর লিচু চাষ ভবিষ্যতে অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে।