উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ববি শিক্ষার্থীদের এক দফা কর্মসূচি, হুঁশিয়ারি শাটডাউনের

- আপডেট সময় ০৮:৩১:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
- / 0
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে সোমবার দুপুরে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনিক ভবন-১–এর নিচতলায় দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়ে বেলা ২টা পর্যন্ত চলে এ কর্মসূচি। শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবি পূরণ না হলে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকা ‘শাটডাউন’ করার হুঁশিয়ারি দেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে ‘যে ভিসিরে পাই না, সেই ভিসিরে চাই না’, ‘স্বৈরাচার ভিসির পদত্যাগ চাই’, ‘নয় মাস চলে গেল, উন্নয়নের কী হলো?’ এমন স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন, যা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের নিচে এসে শেষ হয়।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল ঢালী বলেন, “উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার ৯ মাস পার হলেও দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। দাবি জানানোর পরও পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাঁর পদে থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই।”
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বলেন, “তিন সপ্তাহ ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। কিন্তু উপাচার্য আলোচনায় বসেননি। তাঁর এই অবহেলা অযোগ্যতারই প্রমাণ।”
কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের মোকাব্বেল শেখ, ইংরেজি বিভাগের রাকিন খান, সাংবাদিকতা বিভাগের আজমাইন সাকিব, মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের মাসুম বিল্লাহ এবং বাংলা বিভাগের আশিকুর রহমানসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রশাসনে পক্ষপাতমূলকভাবে শিক্ষক নিয়োগ, ফ্যাসিবাদী আচরণ এবং ২২ দফা দাবির বিষয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেননি। এ ছাড়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার না করা, ক্যানসার আক্রান্ত শিক্ষার্থী জেবুন্নেছা হকের চিকিৎসায় সহযোগিতা না করা এবং আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় তারা ক্ষুব্ধ।
গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য শুচিতা শরমিন রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুচলেকা দিলে মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এর জবাবে শিক্ষার্থীরা বেলা ২টার দিকে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন এবং আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীরা তাঁর বাসভবনের ফটক ভাঙচুর করে। পরদিন ৩২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। এরপর ১৩ এপ্রিল অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের সদস্যপদ বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। দাবিগুলো হলো মুহসিন উদ্দীনের পুনর্বহাল, রেজিস্ট্রার অপসারণ, স্বৈরাচারী শিক্ষকদের অপসারণ ও উপাচার্যের প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা।
২৭ এপ্রিল রেজিস্ট্রারকে কুশপুত্তলিকা দাহ ও কার্যালয়ে তালা লাগানোর ঘটনায় ১০ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে থানায় জিডি হয়। শনিবার সিন্ডিকেট সভায় রেজিস্ট্রারকে অবশেষে অপসারণ করা হয়। এরপরই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে এক দফা আন্দোলনের ডাক দেন।
শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে এবং প্রয়োজনে পুরো ক্যাম্পাস শাটডাউন করা হবে।