ভুট্টার সোনালী সম্ভাবনা: লাভজনক আবাদে ভূরুঙ্গামারীর কৃষকদের নতুন দিগন্ত
কম খরচে বেশি লাভের আশায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়া থাকলে চলতি মৌসুমেও বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। ইতিমধ্যে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে, যা কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে।
উপজেলার দুধকুমার নদের চরাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ভুট্টার আবাদ দিন দিন বাড়ছে। এক সময় পরিত্যক্ত পড়ে থাকা চরাঞ্চলের শত শত একর জমি এখন সোনার ফসলে রূপ নিচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, ভুট্টার উৎপাদন খরচ কম, রোগবালাইয়ের ঝুঁকি কম, সেচ ও সার প্রয়োগও তুলনামূলক কম লাগে। ফলে অন্য ফসলের তুলনায় এটি অধিক লাভজনক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সবুজ ভুট্টার ক্ষেত বাতাসে দুলছে, কৃষকদের মুখে স্বপ্নের হাসি। উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে ১,২৭০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে তা ছাড়িয়ে গেছে, আবাদ হয়েছে ১,৩০৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি বছরই ভুট্টার আবাদ বাড়ছে, যা কৃষি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দিক।
সরকারি প্রণোদনা হিসেবে উপজেলার ৩১০ জন কৃষককে বিনামূল্যে ভুট্টার বীজ ও প্রয়োজনীয় সার দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেচ ও আগাছা দমন করলে ফলন বাড়ে। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ তুলনামূলক কম হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
বলদিয়া ইউনিয়নের কৃষক রহমত আলী জানান, ‘ভুট্টা মাত্র চার মাসের ফসল। ভালো ফলন পেলে এক বিঘা জমিতে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।’ চর-ভূরুঙ্গামারীর কৃষক মনসুর আলী বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি, আশা করি ভালো লাভ হবে। তবে কৃষকদের অভিযোগ, ন্যায্য দাম না পাওয়ায় তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তারা সরকারিভাবে ভুট্টা ক্রয় কেন্দ্র চালুর দাবি জানিয়েছেন, যাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার জানান, কৃষকদের সার্বিক সহায়তা দিতে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা কাজ করছেন। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে ভুট্টার সোনালী সম্ভাবনা কৃষকদের নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে।