ধানের দরপতনে বিপাকে আশুগঞ্জ মোকাম, অস্তিত্ব সংকটে মিল মালিকরা

- আপডেট সময় ০২:৫৮:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫
- / ২ বার পড়া হয়েছে
পূর্বাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ ধান মোকাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে নতুন বোরো ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মেঘনা তীরবর্তী শতবর্ষী এই বাণিজ্য কেন্দ্র আবারও সরব হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন এখানে অন্তত এক লাখ মণ ধান কেনাবেচা হচ্ছে। তবে ধানের দর আশানুরূপ না হওয়ায় হতাশ কৃষকরা। পাশাপাশি সরকারি মূল্য ব্যবস্থার অসঙ্গতির কারণে চালকল মালিকরাও পড়েছেন ভয়াবহ লোকসানে।
বৈশাখের শুরুতেই আশুগঞ্জ মোকামে ব্যস্ততা বাড়ে। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ হাওরাঞ্চলের কৃষক ও ধান ব্যাপারীরা ট্রলার ও বজরা নৌকায় করে ভেজা ধান নিয়ে আসেন এখানে। আধুনিক ড্রায়ার মেশিনে ধান শুকিয়ে রূপান্তর হয় চালে। আশুগঞ্জ মোকাম জেলার প্রায় ২৫০টি চালকলে ধানের জোগান দিয়ে থাকে এবং এখান থেকে প্রতিদিন ১০ কোটি টাকার চাল সরবরাহ হয় ঢাকাসহ চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে।
তবে গেল আমন মৌসুমের পর ডিসেম্বর থেকে দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল অধিকাংশ চালকল। আতপ চালের সরকারি বরাদ্দ না থাকায় তিন মাসের বেশি সময় মিলগুলো অচল ছিল। এখন বোরো ধান আসতে থাকলেও সংকট পুরোপুরি কাটেনি।
চালকল মালিকদের অভিযোগ, সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা ও চালের দাম ৪৯ টাকা। কিন্তু এক মণ ধানে পাওয়া যায় মাত্র ২৫ কেজি চাল। ফলে প্রতি মণ ধানের জন্য ১,৪৪০ টাকা ব্যয়ে মিলাররা চাল বিক্রি করছেন মাত্র ১,২২৫ টাকায় যার মানে প্রতি মণে ২১৫ টাকা লোকসান। মিল মালিকদের মতে, সরকারকে either ধানের দাম কমাতে হবে অথবা চালের দাম বাড়াতে হবে, নইলে মিল চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
আশুগঞ্জ চালকল মালিক সমিতির সভাপতি শাহজাহান সিরাজ বলেন, “আতপ চাল উৎপাদনের জন্য আশুগঞ্জে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি, অথচ যেসব জেলায় চালকল নেই, সেখানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এটা খুবই হতাশাজনক।”
ব্যবসায়ীরা জানান, আমন মৌসুমেও তারা প্রতি কেজিতে ৭ টাকা লোকসান দিয়েছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে মিল মালিকরা ব্যাংক ঋণ খেলাপিতে পরিণত হবেন।
অন্যদিকে কৃষকরাও বলছেন, ধানের দর এতটাই কম যে খরচই উঠে আসে না। তারা বীজ, সার, সেচ ও কীটনাশকের মূল্য কমানোর দাবি জানিয়েছেন।
এছাড়া, মোকামে পাটের বস্তার সংকটও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাধ্য হয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে আইনবহির্ভূত প্লাস্টিকের বস্তা।
চাষি ও মিলার দুই পক্ষের লোকসানে দেশের অন্যতম ধান প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র আশুগঞ্জ মোকাম এখন বড় সংকটে। দ্রুত ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ ও বাজার স্থিতিশীলতার দাবিতে সোচ্চার সংশ্লিষ্ট মহল।