নারী নিরাপত্তায় ও সাম্প্রতিক হামলা নতুন বাংলাদেশের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে – প্রধান উপদেষ্টা
সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে পাঁচজন নারী পেলেন শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী সম্মাননা। পাশাপাশি বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছে জাতীয় নারী ক্রিকেট দল। শনিবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধান উপদেষ্টার হাত থেকে বিজয়ীরা এ সম্মাননা গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা নতুন বাংলাদেশের চেতনার পরিপন্থী। তিনি নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান এবং যুদ্ধক্ষেত্রের মতো সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নারীরা প্রতিটি ক্ষেত্রে সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন। রাজনীতি, অর্থনীতি, ক্রীড়া, শিক্ষা সর্বক্ষেত্রে তাদের অবদান দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। তবে এখনো সমাজে নারীরা নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, “অদম্য নারীরা মুক্তিযুদ্ধে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে হিমালয়ের মতো দৃঢ় প্রতিরোধ গড়েছিলেন। আজও সমাজের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু অনেকক্ষেত্রে তারা এখনো পিছিয়ে আছেন।”
সরকার নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে দুস্থ মায়েদের জন্য আর্থিক সহায়তা, কর্মজীবী নারীদের জন্য হোস্টেল সুবিধা, ডে কেয়ার সেন্টার, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ। নারীর উন্নয়নে আরও কী করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। নারীরা যেন সহজেই অভিযোগ জানাতে পারেন, সে জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ হালনাগাদ করা হচ্ছে এবং যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০২৫ প্রণয়নের কাজ চলছে। পাশাপাশি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠনের কথাও জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নারীবিরোধী অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে। কিন্তু দেশের সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তাদের মোকাবিলা করব। এখনো এমন অনেকে আছেন, যারা নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর বদলে তাদের হেয় করেন। অথচ নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ না হলে বৈষম্যহীন সমাজ গড়া সম্ভব নয়।” ড. ইউনূস বলেন, নারীকে ছোট করে দেখার মানসিকতা বদলাতে হবে। তা না হলে জাতি হিসেবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরির ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নারী ও শিশুদের রক্ষায় আমাদের যুদ্ধক্ষেত্রের মতোই সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে নারীদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি।”