সোমেশ্বরী নদী: এক সময়ের খরস্রোতা নদী এখন মৃতপ্রায়
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার সোমেশ্বরী নদী এক সময় ছিল খরস্রোতা এবং জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তবে শুষ্ক মৌসুমে এই নদী এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে, যার বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। বর্তমানে নদীটি এতটাই সংকুচিত হয়ে পড়েছে যে, মানুষ এখন সহজেই পায়ে হেঁটে পার হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সোমেশ্বরী নদীর বিভিন্ন অংশে চর জেগে উঠেছে, এবং নদীর প্রশস্ততা অনেক জায়গায় ২০০ থেকে ৩০০ ফুটের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। বর্ষাকালে, উজান থেকে নেমে আসা পানি নদীকে কানায় কানায় পূর্ণ করে দেয়, কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে নদীটি মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে।
সোমেশ্বরী নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম গারো পাহাড় থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশের দুর্গাপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মধ্যনগর উপজেলায় এসে বৌলাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০০ কিলোমিটার। কিন্তু গত কয়েক বছরে নদীর অবস্থা দ্রুত অবনতি হয়েছে।
স্থানীয় শিক্ষক হাফিজুর রহমান পারভেজ বলেন, ‘‘ছোটবেলায় সোমেশ্বরী নদী ছিল খরস্রোতা, কিন্তু এখন এটি প্রায় মৃত। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।’’
এছাড়াও প্রতিবছর বন্যার কারণে নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, এবং কৃষকরা পানির অভাবে তাদের ফসলের সেচ দিতে পারছেন না। বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, ‘‘নদীতে পানি না থাকায় আমাদের বোরো ফসলের জমিতে সেচ দিতে পারছি না। নদীটি খনন করার জন্য সরকারের উদ্যোগ জরুরি।’’
মৎস্যজীবি রুহুল আমিনও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘‘এক সময় সোমেশ্বরী নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত, কিন্তু এখন নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মাছের সংখ্যা কমে গেছে।’’ জীবিকার তাগিদে অনেক মৎস্যজীবী তাদের পেশা ছেড়ে দিনমজুরির কাজ শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘‘সোমেশ্বরী নদী খননের ব্যাপারে আমরা আগামী সমন্বয় সভায় আলোচনা করব এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেব।’’ সোমেশ্বরী নদীকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, এটি আরও একবার ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে।