রোজা ভঙ্গের কারণ ও করণীয়: ইসলামের দৃষ্টিতে নির্দেশনা
ইসলামে রোজা কেবল উপবাসের নাম নয়, বরং আত্মসংযম, ধৈর্য ও তাকওয়া অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। একজন রোজাদারকে দিনের বেলায় খাবার, পানীয় এবং যৌনসংসর্গ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট কিছু কারণে রোজা ভেঙে যায়, যা ইসলামী বিধানে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া রোজা ভঙ্গ করা গুরুতর গুনাহ এবং এর সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ করা প্রায় অসম্ভব।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া রমজান মাসের একটি রোজা ভেঙে ফেলে, তার পুরো জীবনের রোজা দিয়েও এর ক্ষতিপূরণ হবে না।” (তিরমিজি: ৭২৩)
রোজা ভঙ্গের প্রধান কারণ
কোরআন ও হাদিসের আলোকে রোজা ভঙ্গের কয়েকটি প্রধান কারণ উল্লেখযোগ্য—
🔹 খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ: ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খেলে বা পান করলে রোজা ভেঙে যায়।
🔹 স্ত্রী-সম্ভোগ: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক রোজাকে ভঙ্গ করে এবং কাফফারা ওয়াজিব হয়।
🔹 ঋতুস্রাব ও সন্তান প্রসব-পরবর্তী রক্তস্রাব: নারীদের এই অবস্থায় রোজা রাখা নিষিদ্ধ এবং রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
এ ছাড়া, ইসলামি ফকিহগণ নিম্নলিখিত ১৭টি কারণে রোজা ভঙ্গ হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন—
যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হলে শুধু কাজা করতে হয় (কাফফারা দিতে হয় না):
✅ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা।
✅ বমির বেশির ভাগ মুখে আসার পর তা গিলে ফেলা।
✅ মেয়েদের মাসিক ও সন্তান প্রসবের পর ঋতুস্রাব।
✅ ইসলাম ত্যাগ করা।
✅ গ্লুকোজ বা শক্তিবর্ধক ইনজেকশন বা সেলাইন গ্রহণ করা।
✅ কুলি করার সময় অনিচ্ছায় গলার ভেতর পানি প্রবেশ করা।
✅ প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে ওষুধ বা অন্য কিছু শরীরে প্রবেশ করানো।
✅ রোজাদারকে জোর করে কিছু খাওয়ানো।
✅ রাত অবশিষ্ট আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর খাবার গ্রহণ করা।
✅ ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের আগেই ইফতার করা।
✅ মুখ ভরে বমি হলে।
✅ ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেলার পর রোজা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছাকৃতভাবে আরেকবার খাওয়া।
✅ বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর তা খেয়ে ফেলা।
✅ কান বা নাক দিয়ে ওষুধ গ্রহণ করা।
✅ জিহ্বার মাধ্যমে দাঁতের ফাঁক থেকে ছোলা পরিমাণ কিছু বের করে খাওয়া।
✅ অল্প বমি মুখে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে তা গিলে ফেলা।
✅ রোজার কথা মনে থাকার পরও অজুতে কুলি বা নাকে পানি নেওয়ার সময় ভেতরে পানি চলে যাওয়া।
রোজা ভঙ্গ হলে করণীয়
রোজা ভঙ্গের কারণ অনুযায়ী করণীয়ও আলাদা—
🔹 যদি খাবার, পানীয় বা স্ত্রী-সহবাসের কারণে রোজা ভেঙে যায়, তবে কাজার পাশাপাশি কাফফারা আদায় করা বাধ্যতামূলক। কাফফারা হিসেবে একটানা ৬০ দিন রোজা রাখতে হবে অথবা ৬০ জন দরিদ্রকে খাওয়াতে হবে।
🔹 উল্লিখিত ১৭টি কারণের যেকোনো একটির কারণে রোজা ভাঙলে, শুধু সেই দিনের কাজা করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না।
রোজা শুধু ক্ষুধা ও পিপাসা সহ্য করার নাম নয়, বরং এটি ধৈর্য, সংযম ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “অনেক রোজাদার আছে, যারা উপবাস করা ছাড়া আর কিছুই লাভ করে না।” (সহিহ মুসলিম)
তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যেন ভুলবশত বা অবহেলায় রোজা ভঙ্গ না হয়ে যায় এবং আমরা পূর্ণ ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।