ধ্বংসের ছায়ার মাঝেই পবিত্র মাহে রমজানের আগমনী প্রস্তুতি নিচ্ছে গাজাবাসী
গাজায় টানা ১৫ মাসের ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে শহর পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। প্রাণঘাতী আগ্রাসনের শিকার ফিলিস্তিনিরা এখনো বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই দুর্দশার মধ্যেই পবিত্র রমজান মাসকে স্বাগত জানাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে গাজার বাসিন্দারা। ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলোকে ব্যানার ও পতাকা দিয়ে সাজিয়ে তুলছেন তারা, যেন বিপর্যয়ের মাঝেও রমজানের আলো ছড়িয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে রমজান উপলক্ষে বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। এক সরকারি মুখপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করলেও কী ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। গত বছর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ৫৫ বছরের নিচে পুরুষ এবং ৫০ বছরের নিচে নারীদের মসজিদে প্রবেশে বাধা দিয়েছিল। এবারও কঠোর নিয়ন্ত্রণের আশঙ্কা রয়েছে।
তবে সব বাধা পেরিয়ে রমজানের পবিত্রতা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর গাজাবাসী। রঙিন আলোয় সাজানো হচ্ছে ভবন, রাস্তায় ঝুলছে রমজান করিম লেখা ব্যানার। ঐতিহ্যবাহী খাবারের প্রস্তুতিও চলছে। অনেকে কদাইফ তৈরিতে ব্যস্ত, কেউবা আলোকসজ্জা কিনতে দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। যদিও যুদ্ধের ক্ষত তাদের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে, তবু বিশ্বাস ও ধৈর্য দিয়ে তারা আবার নতুন করে জীবন সাজানোর চেষ্টা করছেন।
এদিকে, গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। ইসরায়েলের হামলায় অনেকেই বাড়িঘর ও সহায়-সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। বাজারে আগের মতো ক্রেতাদের ভিড় নেই, ব্যবসাও স্থবির। এক লণ্ঠন বিক্রেতা আক্ষেপ করে বলেন, “আগে রমজানে বেচাকেনা জমে উঠত, এখন অবস্থা করুণ। মানুষের জীবন তছনছ হয়ে গেছে।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৮,৩৬৫ জন নিহত এবং ১,১১,৭৮০ জন আহত হয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করতে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস। মিসরের রাজধানী কায়রোয় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে। আজ শনিবার প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি শেষ হতে যাচ্ছে। গাজার মানুষ এখন অপেক্ষায় শান্তি ফিরবে কি না, রমজানের বরকতে নতুন সূর্যোদয় ঘটবে কি না।