জুলাই গণ-অভ্যুত্থান
‘জুলাই যোদ্ধা’ শনাক্তে গোয়েন্দা তদন্ত শুরু
- আপডেট সময় ১১:৪০:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 32
‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে সারা দেশে নতুন করে দুই হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। তালিকা নিয়ে বিতর্ক এড়াতে এসব আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মাঠপর্যায়ে তদন্ত শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শাখার উপসচিব ডা. মো. জহিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, পূর্বের প্রকাশিত তালিকায় কিছু বিতর্কিত থাকায় সেগুলো বাদ দেওয়া হয়। নতুন আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে সঠিক যাচাই নিশ্চিত করতেই গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করা হচ্ছে, যাতে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর কোনো প্রশ্ন না ওঠে এবং প্রকৃত জুলাই যোদ্ধারাই রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা পান।
মন্ত্রণালয় ও তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৬৯ জন নিজেকে আহত জুলাই যোদ্ধা দাবি করে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৩৮ জনের তথ্য যাচাই করছে এসবি ও পিবিআই। গত ৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বিভিন্ন জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তরে নতুন আবেদন জমা পড়ছে। দেশের ৪১ জেলার আবেদনকারীদের তথ্য যাচাইয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো—তাঁরা সত্যিই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত করা।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা ক্ষমতাসীন দলের হামলায় নিহতরা শহীদ এবং আহতরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি পান। জালিয়াতির মাধ্যমে কেউ শহীদ বা আহত হিসেবে তালিকাভুক্ত হলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে দুই ধাপে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ৮৩৬ জন শহীদ এবং ক, খ ও গ—এই তিন শ্রেণিতে মোট ১৪ হাজার ৬৩৬ জন আহত জুলাই যোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তবে তালিকা প্রকাশের পর গত দেড় বছরে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়। অভিযোগ ওঠে, কেউ আন্দোলনের আগে বা পরে মারা গেলেও তাঁদের নাম তালিকায় এসেছে। নতুন আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগও রয়েছে। এসব কারণে সব আবেদন সরাসরি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, নতুন আবেদনগুলো যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ই নেবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন আবেদনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে ঢাকা বিভাগ থেকে। আবেদন যাচাইয়ের সময় রাজনৈতিক তদবির ও সামাজিক চাপের মুখে পড়ছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ কারণেই তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এসবি ও পিবিআইকে।
তদন্তে আবেদনকারীদের পরিচয়, এনআইডি, পেশা, চিকিৎসা নথি, মামলা, সাক্ষ্যপ্রমাণ, হাসপাতালের তথ্য, ভিডিও-ছবি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপাত্ত যাচাই করা হচ্ছে।
পিবিআই প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মোস্তফা কামাল জানান, দেশব্যাপী যাচাই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি শহীদ পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকা ও মাসিক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আহত জুলাই যোদ্ধাদের শ্রেণিভেদে এককালীন আর্থিক সহায়তা, মাসিক ভাতা ও প্রশিক্ষণ সুবিধাও প্রদান করা হচ্ছে।
এক নজরে আট বিভাগে নতুনদের আবেদনের চিত্র
ঢাকা বিভাগে ৫৮২ জন, চট্টগ্রামে ৪৩৩ জন, রাজশাহীতে ২৯৪ জন, সিলেটে ৩১১ জন, রংপুরে ১২২ জন, বরিশালে ৫০ জন, খুলনায় ৮৩ জন, ময়মনসিংহে ৫ জন
গত ৪ মার্চ পর্যন্ত সরকারের স্বীকৃত আহত জুলাই যোদ্ধা
ঢাকা বিভাগে ৩০৯৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯২৭ জন, রংপুর বিভাগে ১৩১৫ জন, খুলনা বিভাগে ১১৯৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ১০৯৩ জন, বরিশাল বিভাগে ৭৭২ জন, সিলেট বিভাগে ৭০৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৩৪ জন।


















