কৌশলগত স্বার্থে নতুন করে কাছাকাছি ভারত-চীন

- আপডেট সময় ১২:২৪:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫
- / 4
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর শুল্কনীতির কারণে সম্প্রতি দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্ক টানাপোড়েনে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভারত নতুন করে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে হাঁটছে। গত সপ্তাহে দিল্লি সফর করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তাঁর এই সফরে দুই দেশ বাণিজ্য বাড়ানো, সীমান্ত বিতর্কে সংলাপ এগিয়ে নেওয়া এবং পাঁচ বছর পর সরাসরি আকাশপথ চালুর বিষয়ে একমত হয়েছে। একই সঙ্গে লিপুলেখ, নাথুলা ও শিপকিলার তিনটি প্রাচীন বাণিজ্যপথ পুনরায় খুলে দেওয়ার ঘোষণা এসেছে।
চলতি মাসের শেষে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিতে চীন সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যেখানে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হবে। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের চাপই দিল্লি ও বেইজিংকে একে অপরের কাছে টেনে এনেছে।
রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে সম্প্রতি ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। এ কারণে নতুন বাণিজ্যচুক্তির আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে, ফলে দিল্লির জন্য কৌশলগতভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। চীনের অবস্থানও ভিন্ন নয়; যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান শুল্কযুদ্ধ ও ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এশিয়ার দুই পরাশক্তি পারস্পরিক সহযোগিতায় আগ্রহী হয়েছে।
ওয়াং ইর সফরে উভয় দেশ সীমান্তে সেনা প্রত্যাহার, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ভ্রমণ সহজীকরণ, পর্যটক ভিসা প্রদান ও দ্বিপক্ষীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে এত পদক্ষেপ সত্ত্বেও কিছু সংশয় রয়ে গেছে। ব্রিটেনের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউসের গবেষক চিতিগ্ বাজপেয়ি মনে করেন, এটি ‘ঠান্ডা শান্তি’। তাঁর মতে, বড় কোনো সংঘাত আপাতত এড়ানো গেলেও টেকসই সমাধানের পথে যাওয়া কঠিন হবে, কারণ সীমান্তে অবকাঠামো নির্মাণে প্রতিযোগিতা চলছে এবং বাস্তব ভূখণ্ড নিয়েও বিরোধ মীমাংসা হয়নি।
পাকিস্তান ইস্যুতেও দুই দেশের অবস্থান একেবারেই বিপরীত। চীন পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘকালীন ‘চিরস্থায়ী বন্ধুত্ব’ বজায় রেখে বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে এবং ইসলামাবাদকে উন্নত সামরিক সরঞ্জাম দিচ্ছে, যা দিল্লির নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি মনে করা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবও ভারতের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
এই অবস্থায় ভারত ও চীন সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় চালুর বিষয়ে একমত হয়েছে। বন্ধ থাকা লিপুলেখ, শিপকিলা ও নাথুলা গিরিপথ দিয়ে এই বাণিজ্য চালুর সমঝোতা হয়েছে, তবে লিপুলেখ ইতিমধ্যেই বিরোধপূর্ণ, যাকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করছে নেপাল।
সব মিলিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের কঠোর শুল্কনীতি ভারত ও চীনকে কাছাকাছি আনলেও আস্থার ঘাটতি, সীমান্ত বিরোধ ও আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে সম্পর্ক নাজুক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে তাদের সম্পর্কের উষ্ণতা কতটা স্থায়ী হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।