ঢাকা ০১:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
মাদারীপুরে মানবপাচার মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ইদ্রিস খাঁ গ্রেফতার স্কুল তহবিলের সংকট: ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২৪ রাজ্যের মামলা গাজায় ইসরাইলি হামলায় একদিনে নিহত ৯৪, আহত শতাধিক ফ্রান্স সেনেগাল থেকে শেষ সামরিক ঘাঁটিও তুলে নিচ্ছে, পশ্চিম আফ্রিকায় ৬৫ বছরের উপস্থিতির অবসান ইরানের ওপর আরও হামলার পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র, আলোচনা না হলে টার্গেট ২টি পারমাণবিক স্থাপনা রাশিয়া-চীন জ্বালানি বাণিজ্যে নতুন রেকর্ড, এলপিজি রপ্তানি বাড়ছে ৭৫০,০০০ টনে গোপালগঞ্জে টানা তৃতীয় দিনের মতো কারফিউ পানিবন্দী ১৭ হাজার পরিবার: ২৪০ কোটি টাকার ক্ষতির চিত্র আসন্ন পাকিস্তান সিরিজের দল ঘোষণা করলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) রাজনৈতিক কর্মসূচি বা বক্তব্যের আগে দলকে হিসেব-নিকেশ করতে হবে: এ্যানি

পানিবন্দী ১৭ হাজার পরিবার: ২৪০ কোটি টাকার ক্ষতির চিত্র

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১২:৩১:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
  • / 6

ছবি: সংগৃহীত

 

নোয়াখালীতে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের ফলে সৃষ্ট বন্যায় এখন পর্যন্ত ২৪০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া গেছে। জেলার ছয়টি উপজেলার অন্তত ১৭ হাজার ৪৬০ পরিবার এখনো পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই দুর্যোগে জেলার মোট ৫৭টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রায় ২ লাখ ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী হন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান জানান, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ এখনো পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন বলে জানান তিনি।

ক্ষতির দিক থেকে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মৎস্য খাতে, যেখানে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু বড় মাছ ভেসে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে ১১২ কোটি টাকার বেশি এবং পোনা মাছের ক্ষতি ২২ কোটি টাকারও বেশি। কৃষি খাতে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়েছে ৫ হাজার ৫০৭ হেক্টর জমির ফসল, আর আংশিক ক্ষতি হয়েছে আরও ২ হাজার ৬৬০ হেক্টরে। আমন ধানের বীজতলার ক্ষতি হয়েছে ৮৯১ হেক্টর জমিতে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সুবর্ণচরের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাঁর প্রায় ৪০ কেজি ধানের বীজতলা নষ্ট হয়েছে, যা দিয়ে চার একর জমি আবাদ করা যেত।

প্রাণিসম্পদ খাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হাঁস-মুরগি মারা গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া কবিরহাট, সেনবাগ ও সুবর্ণচর উপজেলায় ৫৮টি বসতঘর আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জেলার প্রায় ৬০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়েছে। শুধু সড়ক খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। অন্যদিকে কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও হাতিয়ায় বাঁধ ও নদীর তীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এই খাতের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৩ কোটি টাকা।

বন্যা পরবর্তী জলাবদ্ধতা এখনো পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। কবিরহাট, সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও সেনবাগে জলাবদ্ধতা তুলনামূলক বেশি। এসব এলাকায় নিচু রাস্তা ও বাড়িঘরে এখনো পানি জমে রয়েছে। কাদিরহানিফ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. আবদুল্লাহ জানান, তাঁর ওয়ার্ডের প্রায় ৫৫ শতাংশ বাড়িতে এখনো পানি জমে আছে। পাশের নোয়াখালী খাল দিয়ে পানি নামতে সময় নিচ্ছে, যা দুর্ভোগ দীর্ঘস্থায়ী করার আশঙ্কা তৈরি করছে।

জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, জুলাই মাসে যেখানে সাধারণত ৬৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, সেখানে প্রথম ১০ দিনেই ৬২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে বলে জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

পানিবন্দী ১৭ হাজার পরিবার: ২৪০ কোটি টাকার ক্ষতির চিত্র

আপডেট সময় ১২:৩১:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

 

নোয়াখালীতে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের ফলে সৃষ্ট বন্যায় এখন পর্যন্ত ২৪০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া গেছে। জেলার ছয়টি উপজেলার অন্তত ১৭ হাজার ৪৬০ পরিবার এখনো পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই দুর্যোগে জেলার মোট ৫৭টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রায় ২ লাখ ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী হন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান জানান, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ এখনো পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন বলে জানান তিনি।

ক্ষতির দিক থেকে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মৎস্য খাতে, যেখানে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু বড় মাছ ভেসে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে ১১২ কোটি টাকার বেশি এবং পোনা মাছের ক্ষতি ২২ কোটি টাকারও বেশি। কৃষি খাতে সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়েছে ৫ হাজার ৫০৭ হেক্টর জমির ফসল, আর আংশিক ক্ষতি হয়েছে আরও ২ হাজার ৬৬০ হেক্টরে। আমন ধানের বীজতলার ক্ষতি হয়েছে ৮৯১ হেক্টর জমিতে, যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সুবর্ণচরের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাঁর প্রায় ৪০ কেজি ধানের বীজতলা নষ্ট হয়েছে, যা দিয়ে চার একর জমি আবাদ করা যেত।

প্রাণিসম্পদ খাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হাঁস-মুরগি মারা গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া কবিরহাট, সেনবাগ ও সুবর্ণচর উপজেলায় ৫৮টি বসতঘর আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জেলার প্রায় ৬০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়েছে। শুধু সড়ক খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। অন্যদিকে কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও হাতিয়ায় বাঁধ ও নদীর তীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এই খাতের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৩ কোটি টাকা।

বন্যা পরবর্তী জলাবদ্ধতা এখনো পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। কবিরহাট, সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও সেনবাগে জলাবদ্ধতা তুলনামূলক বেশি। এসব এলাকায় নিচু রাস্তা ও বাড়িঘরে এখনো পানি জমে রয়েছে। কাদিরহানিফ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. আবদুল্লাহ জানান, তাঁর ওয়ার্ডের প্রায় ৫৫ শতাংশ বাড়িতে এখনো পানি জমে আছে। পাশের নোয়াখালী খাল দিয়ে পানি নামতে সময় নিচ্ছে, যা দুর্ভোগ দীর্ঘস্থায়ী করার আশঙ্কা তৈরি করছে।

জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, জুলাই মাসে যেখানে সাধারণত ৬৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, সেখানে প্রথম ১০ দিনেই ৬২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে বলে জানান তিনি।