১২:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম :
নিজামী-মীর কাসেম-সালাউদ্দিন কাদেরকে মিথ্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে: মির্জা ফখরুল ২০২৩ সাল থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধের খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৯ থেকে ৬৭ বিলিয়ন ডলার। মার্কিন সেনা ও সিআইএ এজেন্টদের বহিষ্কারের চিন্তা কলম্বিয়া প্রেসিডেন্ট পেত্রোর পেন্টাগনের বড় চুক্তি পেল ট্রাম্পের ছেলের ড্রোন কোম্পানি কেন ট্রাম্প-পুতিনের বুদাপেস্ট বৈঠক বাতিল হলো? হুমকিতে বিশ্বব্যাপী পোলিও টিকাদান কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রকে ভেনেজুয়েলার হুঁশিয়ারি: “আমাদের হাতে ৫ হাজার রুশ ক্ষেপণাস্ত্র” সিইসির সঙ্গে বিএনপির বৈঠক বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, গভীর সমুদ্রে যাত্রা নিষেধ আতলেতিকোর জালে ১৪ মিনিটে ৪ গোল, দাপুটে জয়ে আর্সেনাল

বছর ঘুরে ফিরে আসলো গণঅভ্যুত্থানের সেই রক্তাক্ত জুলাই

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০২:০০:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
  • / 356

ছবি সংগৃহীত

 

জুলাই ২০২৪, স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে রক্তাক্ত আরেকটি অধ্যায় যুক্ত হলো এই মাসে। শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলন দমন করতে যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, তা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বর্বরতা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ১৪শ’ শহীদ ও প্রায় ২০ হাজার আহত মানুষের আত্মত্যাগ এখনও প্রশ্ন তুলছে — নতুন বাংলাদেশ কি তাদের ঋণ শোধ করতে পেরেছে?

২০২৪ সালের ৫ জুন, হাইকোর্টের একটি রায়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের রায়কে অবৈধ ঘোষণা করা হলে ফের আলোচনায় আসে কোটা সংস্কারের ইস্যু। ছাত্রসমাজের দাবিটা ছিল সহজ ৫৫ ভাগ কোটার বাইরে বের হয়ে মেধার ভিত্তিতে চাকরিতে নিয়োগ।

বিজ্ঞাপন

এরপর ১ জুলাই ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ রূপ নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে, যা শেষ পর্যন্ত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনা ঘটায়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ বলেও আখ্যা দেন। শুধু কটাক্ষেই থেমে থাকেননি, বরং গুম, খুন ও ভয়াবহ দমন-পীড়নের মাধ্যমে আন্দোলনকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করেন।

কিন্তু ছাত্রদের শেষ আশা ছিল “মুক্তি অথবা মৃত্যু”। আদালতের রায় তড়িঘড়ি করে বাতিল করেও, শেখ হাসিনা আর থামাতে পারেননি বিপ্লবের আগুন।

জুলাইয়ের এই আন্দোলন দ্রুতই রূপ নেয় ফ্যাসিবাদবিরোধী গণআন্দোলনে। বৈষম্য, গুম, খুন ও দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ মানুষ ছাত্রজনতার পাশে এসে দাঁড়ায়। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি সব ব্যবহার করেও থামানো যায়নি সেই ঢল।

১৮ ও ১৯ জুলাই বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট, চালানো হয় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। তবুও থামেনি মানুষ কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নেমে আসে কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, পেশাজীবী, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষ। আন্দোলন রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে।

৩ আগস্ট শহীদ মিনারে লাখো মানুষের সমাবেশ থেকে আসে একদফা দাবি শেখ হাসিনার পদত্যাগ। ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের পাল্টা হামলায় আবারও রক্তের বন্যা বয়ে যায়।

অবশেষে ৫ আগস্ট ভোরে যখন ঢাকার রাজপথ ছাপিয়ে জনতার ঢল গণভবনের দিকে এগোয়, শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন। ইতিহাসে এই দিন চিহ্নিত হয় ‘৩৬ জুলাই’ নামে।

সাংবাদিক আশরাফ কায়সার বলেছেন, “এটি কোনো রাজনৈতিক দলের আন্দোলন ছিল না, বরং কিছু সাহসী তরুণের নেতৃত্বে গড়া গণবিদ্রোহ।” ফারুক ওয়াসিফের মতে, “এ জনগণকে আর কোনো ফাঁদে ফেলে বোকা বানানো যাবে না।”

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষারও মন্তব্য করেছেন, “জুলাইয়ের এই গণঅভ্যুত্থান সত্যিকারের বিপ্লব হবে, যদি এর মধ্য দিয়ে স্থায়ী রাজনৈতিক সংস্কার আসে।”

নতুন স্বপ্নের, নতুন আশার যে জুলাই তার বাস্তবায়ন কতদূর এগোয়, সেটাই এখন ইতিহাসের প্রতীক্ষা।

নিউজটি শেয়ার করুন

বছর ঘুরে ফিরে আসলো গণঅভ্যুত্থানের সেই রক্তাক্ত জুলাই

আপডেট সময় ০২:০০:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

 

জুলাই ২০২৪, স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে রক্তাক্ত আরেকটি অধ্যায় যুক্ত হলো এই মাসে। শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলন দমন করতে যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, তা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বর্বরতা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ১৪শ’ শহীদ ও প্রায় ২০ হাজার আহত মানুষের আত্মত্যাগ এখনও প্রশ্ন তুলছে — নতুন বাংলাদেশ কি তাদের ঋণ শোধ করতে পেরেছে?

২০২৪ সালের ৫ জুন, হাইকোর্টের একটি রায়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের রায়কে অবৈধ ঘোষণা করা হলে ফের আলোচনায় আসে কোটা সংস্কারের ইস্যু। ছাত্রসমাজের দাবিটা ছিল সহজ ৫৫ ভাগ কোটার বাইরে বের হয়ে মেধার ভিত্তিতে চাকরিতে নিয়োগ।

বিজ্ঞাপন

এরপর ১ জুলাই ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ রূপ নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে, যা শেষ পর্যন্ত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনা ঘটায়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ বলেও আখ্যা দেন। শুধু কটাক্ষেই থেমে থাকেননি, বরং গুম, খুন ও ভয়াবহ দমন-পীড়নের মাধ্যমে আন্দোলনকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করেন।

কিন্তু ছাত্রদের শেষ আশা ছিল “মুক্তি অথবা মৃত্যু”। আদালতের রায় তড়িঘড়ি করে বাতিল করেও, শেখ হাসিনা আর থামাতে পারেননি বিপ্লবের আগুন।

জুলাইয়ের এই আন্দোলন দ্রুতই রূপ নেয় ফ্যাসিবাদবিরোধী গণআন্দোলনে। বৈষম্য, গুম, খুন ও দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ মানুষ ছাত্রজনতার পাশে এসে দাঁড়ায়। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি সব ব্যবহার করেও থামানো যায়নি সেই ঢল।

১৮ ও ১৯ জুলাই বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট, চালানো হয় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। তবুও থামেনি মানুষ কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নেমে আসে কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, পেশাজীবী, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষ। আন্দোলন রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে।

৩ আগস্ট শহীদ মিনারে লাখো মানুষের সমাবেশ থেকে আসে একদফা দাবি শেখ হাসিনার পদত্যাগ। ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের পাল্টা হামলায় আবারও রক্তের বন্যা বয়ে যায়।

অবশেষে ৫ আগস্ট ভোরে যখন ঢাকার রাজপথ ছাপিয়ে জনতার ঢল গণভবনের দিকে এগোয়, শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন। ইতিহাসে এই দিন চিহ্নিত হয় ‘৩৬ জুলাই’ নামে।

সাংবাদিক আশরাফ কায়সার বলেছেন, “এটি কোনো রাজনৈতিক দলের আন্দোলন ছিল না, বরং কিছু সাহসী তরুণের নেতৃত্বে গড়া গণবিদ্রোহ।” ফারুক ওয়াসিফের মতে, “এ জনগণকে আর কোনো ফাঁদে ফেলে বোকা বানানো যাবে না।”

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষারও মন্তব্য করেছেন, “জুলাইয়ের এই গণঅভ্যুত্থান সত্যিকারের বিপ্লব হবে, যদি এর মধ্য দিয়ে স্থায়ী রাজনৈতিক সংস্কার আসে।”

নতুন স্বপ্নের, নতুন আশার যে জুলাই তার বাস্তবায়ন কতদূর এগোয়, সেটাই এখন ইতিহাসের প্রতীক্ষা।