টেসলার ভবিষ্যতের জন্য রাজনীতিতে ব্যয় কমাচ্ছেন ইলন মাস্ক

- আপডেট সময় ০১:১৩:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
- / 10
যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নিয়ার ও টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অনুদান কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কাতারে অনুষ্ঠিত এক অর্থনৈতিক সম্মেলনে মাস্ক জানান, তিনি রাজনীতিতে জড়ালেও তাতে কোনো অনুশোচনা নেই। তবে এখন থেকে তিনি রাজনৈতিক খাতে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবেন।
মাস্ক বলেন, “আমি মনে করি, ইতিমধ্যে যা করা দরকার ছিল, তা করেছি। এখন তেমন কোনো রাজনৈতিক খরচের প্রয়োজন দেখছি না।” তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারে তিনি ২৫০ মিলিয়ন বা ২৫ কোটি ডলারেরও বেশি অনুদান দিয়েছেন।
এ সম্মেলনেই মাস্ক ঘোষণা দেন, আগামী পাঁচ বছর তিনি বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেসলার সিইও পদে থাকার পরিকল্পনা করছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠার পর মাস্কের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারি নজরদারি বাড়ে। এর মধ্যে রয়েছে রকেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স, উপগ্রহভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স। একই সঙ্গে টেসলা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি তদন্ত শুরু হয়।
ফেডারেল ব্যয় হ্রাসে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘ডজি’ প্রকল্পের নেতৃত্বে মাস্ককে বসানো হলেও, প্রতিশ্রুত সাশ্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ বিষয়ে মাস্ক বলেন, “আমরা কেবল উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের ছিল না। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা যথেষ্ট ভালো করেছি।”
তবে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা জানিয়েছে, ডজির খরচ কমানোর প্রভাবে এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধসহ অনেক মানবিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অভিযোগ মানতে নারাজ মাস্ক।
ডজির অংশ হিসেবে হাজার হাজার ফেডারেল কর্মী ছাঁটাই এবং টেসলার কিছু নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে মার্কিন সমাজে ক্ষোভ তৈরি হয়। টেসলার বিক্রিও কমে যায়, যা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। অনেকেই মনে করেন, মাস্ক হয়তো মূল ব্যবসায় মনোযোগ হারাচ্ছেন।
তবে মাস্ক জানান, ইউরোপের বাইরেও টেসলার ব্যবসা ভালো চলছে এবং শেয়ারের মূল্যও বেড়েছে। “চাহিদা নিয়ে কোনো সমস্যা দেখছি না,” বলেন তিনি।
ব্লুমবার্গ সাংবাদিক মিশাল হোসেন সম্মেলনের মঞ্চে মাস্ককে প্রশ্ন করেন, টেসলার নেতৃত্বে থাকার প্রতিশ্রুতি কি তাঁর পারিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করে? কারণ, মাস্ক টেসলা থেকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ বেতন দাবি করেছিলেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের আদালত এরই মধ্যে দুবার খারিজ করেছে।
জবাবে মাস্ক বলেন, “এটা অর্থের বিষয় নয়, এটি যৌক্তিক নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন।”
রাজনীতিতে জড়ানোর পর সমালোচনার মুখে পড়া এবং টেসলার ওপর আক্রমণ সম্পর্কে মাস্ক বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে আঘাত পেয়েছি, তবে আমি যা করেছি, সেটাই প্রয়োজন ছিল।”
উল্লেখযোগ্য হলো, উইসকনসিন সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনে মাস্ক সমর্থিত প্রার্থী পরাজিত হন, যদিও সেখানে তাঁর পক্ষ থেকে দুই কোটিরও বেশি ডলার ব্যয় হয়েছিল। আবার ট্রাম্প মাস্কের পরামর্শ উপেক্ষা করে আমদানি শুল্ক আরোপ করেন, যা মাস্কের প্রভাবকে আরও সীমিত করে তোলে।
সব মিলিয়ে, রাজনৈতিক অনুদান ও প্রভাব খাটানো নিয়ে নিজের অবস্থান পুনর্বিবেচনায় নিচ্ছেন ইলন মাস্ক এমন ইঙ্গিত স্পষ্ট।