খাদ্য নিরাপত্তা নয়, দরকার খাদ্যে সার্বভৌমত্ব: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

- আপডেট সময় ০৮:৪৯:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
- / 15
খাদ্য নিরাপত্তার কথা বলে বারবার কৃষকের স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, শহরের মানুষের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে গিয়ে আমদানির মাধ্যমে দেশের কৃষক ও খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তাই কেবল ভোক্তার খাদ্য নিরাপত্তা নয়, কৃষকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেই খাদ্যে সার্বভৌমত্ব অর্জনের পথ তৈরি করতে হবে।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকের ন্যায্যতা সম্মেলন ২০২৫’-এর প্রথম অধিবেশন ‘খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকের ন্যায্যতা’য় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরিদা আখতার বলেন, “আমাদের দেশে খাদ্যকে কেবল ভোক্তার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়। অথচ কৃষক ও খামারিরাও এই চেইনের অংশ। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ বাড়ছে, কিন্তু সেটির ফলশ্রুতিতে পশুর ব্যবহার কমে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য হুমকি।”
তিনি আরও বলেন, “খাদ্য উৎপাদনের নামে আমরা যদি প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংস করি, তাহলে তা আর খাদ্য থাকবে না—তা হবে শিল্পপণ্য। শিল্পায়িত কৃষিতে কৃষকের জন্য জায়গা থাকবে না। কৃষিকে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এগোতে হবে।”
তিনি জলাশয় ধ্বংস ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা মাছের উন্মুক্ত আহরণে বিশ্বে দ্বিতীয় হলেও হাওর, নদী-নালা ধ্বংস করছি নিজেরাই। কীটনাশকের কারণে মাছ মরে যাচ্ছে, গরু-ছাগল মারা যাচ্ছে, এমনকি মানুষও আক্রান্ত হচ্ছে। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ।”
হাওরে কীটনাশকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “এই অঞ্চলে মাছের প্রাকৃতিক উৎস থাকলেও আমরা কীটনাশক দিয়ে তা ধ্বংস করছি। আগাছা দমন করতে গিয়ে প্রাণিসম্পদ ক্ষতির মুখে পড়ছে। এমনকি কীটনাশকযুক্ত সবজি খেয়ে ছাগলও মারা যাচ্ছে। এসব উদাহরণ কৃষকদের সচেতন করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে।”
ডিম ও মাংস আমদানির প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “গত বছর বন্যার সময় ডিমের দাম বাড়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানি করে। এতে স্থানীয় খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়ে। এখন আবার আমেরিকা, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সস্তায় মাংস আমদানির কথা উঠছে। অথচ আমাদের দেশে এক কোটি ২৪ লাখ গবাদিপশু মজুত আছে, যা দেশের চাহিদার চেয়ে ২২ লাখ বেশি। যদি আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে লাখ লাখ খামারি ধ্বংস হয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, “এই খাতে টিকে থাকতে হলে কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। আমদানি নয়, দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে হবে। খাদ্যের উপর সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণ না থাকলে, দীর্ঘমেয়াদে কৃষকও থাকবে না, খাদ্য নিরাপত্তাও থাকবে না।”
তিনি কৃষকদের সচেতন করতে মাঠ পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।