ঢাকা ০৩:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চীনের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে জাপানের নতুন ‘ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেলগান’ উন্মোচন

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৪:৪৫:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
  • / 34

ছবি সংগৃহীত

 

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সামরিক তৎপরতা বাড়ার প্রেক্ষাপটে জাপান তাদের নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে নতুন অস্ত্র ‘ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেলগান’ উন্মোচন করেছে। এই অত্যাধুনিক অস্ত্র চীনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় সক্ষম। সম্প্রতি প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, রেলগানটি নৌবাহিনীর ‘জেএস আসুকা’ জাহাজে স্থাপন করা হয়েছে।

রেলগান একটি বৈপ্লবিক প্রযুক্তি, যা প্রচলিত বিস্ফোরক বা প্রপেলান্ট ছাড়াই শুধুমাত্র ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তির মাধ্যমে গোলা নিক্ষেপ করে। এতে একদিকে খরচ কম, অন্যদিকে প্রতিপক্ষের দ্রুতগামী অস্ত্র ভূপাতিত করার ক্ষমতাও অনেক বেশি। রেলগান থেকে ছোঁড়া গোলার গতি প্রতি সেকেন্ডে ২,৫০০ মিটার, যা সাধারণ ট্যাংকের গুলির গতির তুলনায় অনেক গুণ বেশি।

জাপানের মেরিটাইম সেলফ ডিফেন্স ফোর্স (জেএমএসডিএফ) জানায়, রেলগানের মাধ্যমে নৌবাহিনীর প্রতিরক্ষা বহুগুণে শক্তিশালী হবে। ভাইস অ্যাডমিরাল ওমাচি কাতসুশি রেলগানসহ ‘জেএস আসুকা’ জাহাজ পরিদর্শন করেন। প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও লজিস্টিক্স এজেন্সি এই অস্ত্র উন্নয়নে কাজ করছে। কর্মকর্তারা জানান, রেলগান আকাশ, সমুদ্র ও স্থল লক্ষ্যবস্তুতে অধিক নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম।

জাপানের প্রতিরক্ষা দপ্তর জানায়, ২০১৬ সালে রেলগান নিয়ে গবেষণা শুরু হয় এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে এটি প্রথম জাহাজ থেকে গোলা নিক্ষেপ করে। দেশটির মতে, ২০২২ সালে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ছিল মাত্র ৬০ শতাংশ, যা বাড়াতেই এই নতুন অস্ত্র তৈরি।

বিশ্বের অন্যান্য দেশও এই প্রযুক্তিতে পিছিয়ে নেই। চীন অনেকদিন ধরেই রেলগান নিয়ে গবেষণা করছে, যদিও তা গোপনীয়তার মধ্যে। ২০১৮ সালে চীনের একটি জাহাজে রেলগানের ছবি প্রকাশ পেয়েছিল। এছাড়া ভারত, রাশিয়া এবং তুরস্কও তাদের নিজস্ব রেলগান প্রযুক্তি পরীক্ষায় ব্যস্ত।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে তাদের রেলগান প্রকল্প বাতিল করে। এক দশকের গবেষণায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পর, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও অতিরিক্ত গরমের সমস্যায় তারা এই প্রকল্প বন্ধ করে দেয়।

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য রেলগান নয়, বরং ‘ড্রাগনফায়ার’ নামে একটি লেজার অস্ত্র উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছে। এই ‘ডিরেক্ট এনার্জি ওয়েপন’ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে লেজার রশ্মি ব্যবহার করে এবং এটি চালাতে খরচ মাত্র ১০ পাউন্ড। ইউক্রেনও যুক্তরাজ্যের নকশায় নিজেদের লেজার অস্ত্র তৈরি করছে।

বিশ্বের পরাশক্তিগুলো যেখানে নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার আধুনিকায়নে ব্যস্ত, সেখানে জাপানের রেলগান প্রকল্প তাদের প্রতিরক্ষাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলেই মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।

সূত্র: টেলিগ্রাফ

নিউজটি শেয়ার করুন

চীনের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে জাপানের নতুন ‘ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেলগান’ উন্মোচন

আপডেট সময় ০৪:৪৫:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

 

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সামরিক তৎপরতা বাড়ার প্রেক্ষাপটে জাপান তাদের নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে নতুন অস্ত্র ‘ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেলগান’ উন্মোচন করেছে। এই অত্যাধুনিক অস্ত্র চীনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় সক্ষম। সম্প্রতি প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, রেলগানটি নৌবাহিনীর ‘জেএস আসুকা’ জাহাজে স্থাপন করা হয়েছে।

রেলগান একটি বৈপ্লবিক প্রযুক্তি, যা প্রচলিত বিস্ফোরক বা প্রপেলান্ট ছাড়াই শুধুমাত্র ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তির মাধ্যমে গোলা নিক্ষেপ করে। এতে একদিকে খরচ কম, অন্যদিকে প্রতিপক্ষের দ্রুতগামী অস্ত্র ভূপাতিত করার ক্ষমতাও অনেক বেশি। রেলগান থেকে ছোঁড়া গোলার গতি প্রতি সেকেন্ডে ২,৫০০ মিটার, যা সাধারণ ট্যাংকের গুলির গতির তুলনায় অনেক গুণ বেশি।

জাপানের মেরিটাইম সেলফ ডিফেন্স ফোর্স (জেএমএসডিএফ) জানায়, রেলগানের মাধ্যমে নৌবাহিনীর প্রতিরক্ষা বহুগুণে শক্তিশালী হবে। ভাইস অ্যাডমিরাল ওমাচি কাতসুশি রেলগানসহ ‘জেএস আসুকা’ জাহাজ পরিদর্শন করেন। প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও লজিস্টিক্স এজেন্সি এই অস্ত্র উন্নয়নে কাজ করছে। কর্মকর্তারা জানান, রেলগান আকাশ, সমুদ্র ও স্থল লক্ষ্যবস্তুতে অধিক নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম।

জাপানের প্রতিরক্ষা দপ্তর জানায়, ২০১৬ সালে রেলগান নিয়ে গবেষণা শুরু হয় এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে এটি প্রথম জাহাজ থেকে গোলা নিক্ষেপ করে। দেশটির মতে, ২০২২ সালে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ছিল মাত্র ৬০ শতাংশ, যা বাড়াতেই এই নতুন অস্ত্র তৈরি।

বিশ্বের অন্যান্য দেশও এই প্রযুক্তিতে পিছিয়ে নেই। চীন অনেকদিন ধরেই রেলগান নিয়ে গবেষণা করছে, যদিও তা গোপনীয়তার মধ্যে। ২০১৮ সালে চীনের একটি জাহাজে রেলগানের ছবি প্রকাশ পেয়েছিল। এছাড়া ভারত, রাশিয়া এবং তুরস্কও তাদের নিজস্ব রেলগান প্রযুক্তি পরীক্ষায় ব্যস্ত।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে তাদের রেলগান প্রকল্প বাতিল করে। এক দশকের গবেষণায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পর, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও অতিরিক্ত গরমের সমস্যায় তারা এই প্রকল্প বন্ধ করে দেয়।

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য রেলগান নয়, বরং ‘ড্রাগনফায়ার’ নামে একটি লেজার অস্ত্র উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছে। এই ‘ডিরেক্ট এনার্জি ওয়েপন’ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে লেজার রশ্মি ব্যবহার করে এবং এটি চালাতে খরচ মাত্র ১০ পাউন্ড। ইউক্রেনও যুক্তরাজ্যের নকশায় নিজেদের লেজার অস্ত্র তৈরি করছে।

বিশ্বের পরাশক্তিগুলো যেখানে নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার আধুনিকায়নে ব্যস্ত, সেখানে জাপানের রেলগান প্রকল্প তাদের প্রতিরক্ষাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলেই মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।

সূত্র: টেলিগ্রাফ