গরমের ভয়াবহ শত্রু হিটস্ট্রোক, থেকে বাঁচতে কি করবেন

- আপডেট সময় ০১:৩৭:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫
- / ৫২৪ বার পড়া হয়েছে
গরমকাল মানেই নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি। তার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো হিটস্ট্রোক। এটি অতিরিক্ত গরমে সৃষ্ট একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যসমস্যা। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, যখন তীব্র গরমে শরীর তার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না এবং তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়, তখন সেটি হিটস্ট্রোক হিসেবে চিহ্নিত হয়।
সাধারণভাবে শরীর রক্তসঞ্চালন ও ঘামের মাধ্যমে নিজেকে ঠান্ডা রাখে। কিন্তু বেশি সময় গরম ও আর্দ্র পরিবেশে অবস্থান করলে শরীরের এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এতে শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যায়, ঘাম বন্ধ হয়ে যায় এবং দ্রুতই গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। হিটস্ট্রোক যেকোনো মানুষেরই হতে পারে, তবে কিছু শ্রেণির মানুষ এতে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
ঝুঁকিতে কারা?
বয়স্ক ব্যক্তি: বয়স বাড়ার সঙ্গে শরীরের শক্তি কমে যায়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়, এবং অনেকেই নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন যা হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ায়। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ থাকলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
শিশুরা: শিশুদের শরীর তাপ নিয়ন্ত্রণে দুর্বল। খেলার সময় বেশি পরিশ্রম করলে এবং পানি কম খেলে হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে।
পরিশ্রমকারী মানুষ: রোদে কাজ করা কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক বা ফুটপাতে কাজ করা মানুষদের হিটস্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। দীর্ঘ সময় রোদে থাকলে শরীরে পানির ঘাটতি ও অতিরিক্ত ক্লান্তি দেখা দেয়।
অসুস্থ বা ওষুধ সেবনকারী ব্যক্তি: কিছু ওষুধ যেমন ডাইইউরেটিক (প্রস্রাব বাড়ায়), মানসিক রোগ বা বিষণ্ণতার ওষুধ শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলে এবং হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
হিটস্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ
হিটস্ট্রোক হঠাৎ হয় না, তার আগে কিছু পূর্বাভাস দিয়ে যায়। যেমন:
হিট ক্র্যাম্প: মাংসপেশিতে টান, দুর্বলতা, প্রচণ্ড পিপাসা।
হিট এক্সহসশন: মাথাব্যথা, ঘাম, বমিভাব, ঝিমঝিম ভাব, অসংলগ্ন আচরণ।
এই অবস্থায় তাপ নিয়ন্ত্রণ এখনো সচল থাকে, তবে ব্যবস্থা না নিলে তা হিটস্ট্রোকে রূপ নিতে পারে।
হিটস্ট্রোকের লক্ষণ
১. শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়, ঘাম বন্ধ হয়ে যায় এবং শরীর অত্যন্ত গরম অনুভূত হয়।
২. ত্বক শুকনো ও লালচে হয়, নিঃশ্বাস ও হার্টবিট দ্রুত হয়, রক্তচাপ কমে যায়।
৩. খিঁচুনি, বিভ্রান্ত আচরণ, অসংলগ্ন কথা, হ্যালুসিনেশন, অস্থিরতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
প্রতিরোধে করণীয়
১. হালকা, ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের বিশেষ করে সুতি পোশাক পরুন।
২. ঘরের ভেতরে বা ছায়ায় থাকার চেষ্টা করুন, অপ্রয়োজনে বাইরে যাবেন না।
৩. বাইরে যেতে হলে ছাতা, ক্যাপ বা চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি ব্যবহার করুন।
৪. বাইরে কাজ করলে মাথা ঢাকার ব্যবস্থা করুন এবং মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিন।
৫. প্রচুর বিশুদ্ধ পানি ও লবণযুক্ত পানীয় (যেমন খাবার স্যালাইন, ফলের রস, লাচ্ছি) পান করুন।
৬. অসুস্থ, ওষুধ সেবনকারী বা হার্টের রোগীরা রোদ এড়িয়ে চলুন।
৭. প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সম্ভব হলে দুপুরের তীব্র রোদে বাইরে বের হওয়া বন্ধ রাখুন।
সতর্ক থাকুন, নিরাপদ থাকুন। গরমের এই ভয়াবহ সময়টায় নিজের ও পরিবারের প্রতি বাড়তি যত্ন নিন। হিটস্ট্রোক প্রতিরোধে সচেতনতাই প্রধান প্রতিরক্ষা।