বাংলাদেশের মানচিত্র হয়তো নতুনভাবে আঁকার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে: রিজওয়ানা হাসান

- আপডেট সময় ০৭:৪৭:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
- / 41
জলবায়ু পরিবর্তন এখন শুধু একটি পরিবেশগত ইস্যু নয়, বরং বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা, ভূখণ্ডের অখণ্ডতা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য এক গভীর হুমকি হয়ে উঠেছে। এমনটাই জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সোমবার ঢাকার ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে ‘জাতীয় নিরাপত্তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ শীর্ষক সেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মানে শুধু লবণাক্ত পানি নয় এটা মানে আমাদের ভূখণ্ড হারানো, জনগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া এবং সার্বভৌমত্বের সংকট।”
তিনি সতর্ক করেন, শতকের মাঝামাঝি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি এক মিটার বাড়ে, তবে বাংলাদেশের ২১টি উপকূলীয় জেলা পানিতে ডুবে যেতে পারে, বাস্তুচ্যুত হবে কোটি মানুষ। মিঠা পানির নদীতে লবণ ঢুকে পড়বে, ধ্বংস হবে কৃষি ও মৎস্য খাত।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট আরো বিপজ্জনক। দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ তাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে মিঠা পানির মাছ থেকে। এই খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়বে। উপদেষ্টা আরও জানান, প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও খরার কারণে দেশের জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ ক্ষতি হয়, যা ২০৫০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হতে পারে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড যদি পানিতে তলিয়ে যায়, তাহলে বাকি দুই-তৃতীয়াংশে মানুষের চাপ বেড়ে যাবে, সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা হয়ে উঠবে নিত্যদিনের বাস্তবতা।”
বিশ্ব রাজনীতিতে জলবায়ু ইস্যুর অবহেলা নিয়েও তিনি তীব্র সমালোচনা করেন। কিয়োটো চুক্তি ব্যর্থ হয়েছে, প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়নও দুর্বল। অথচ পৃথিবীর ৮০ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে মাত্র কয়েকটি উন্নত দেশ G20 দেশগুলো।
“বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো চরম মূল্য দিচ্ছে। যদি সব দেশ প্রতিশ্রুতি মেনে চলে তবুও গড় তাপমাত্রা ৩ থেকে ৪.৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়বে যা মানবজাতির জন্য সহনীয় নয়,” বলেন তিনি।
জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় তিনি কার্যকর পদক্ষেপ ও বৈশ্বিক দায়িত্ববোধ জোরদারের আহ্বান জানান।