এই গ্রীষ্মে সুস্থ থাকতে যে সমস্ত ফল বেশি খাবেন

- আপডেট সময় ০১:৫১:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
- / 14
গ্রীষ্মকাল আমাদের শরীরের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এই সময় অতিরিক্ত ঘাম, পানিশূন্যতা, ক্লান্তি ও হিটস্ট্রোকের মতো সমস্যা দেখা দেয়। তাই শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, পানির ঘাটতি পূরণ এবং পুষ্টি বজায় রাখার জন্য ফল খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। ফলে থাকা প্রাকৃতিক পানি, ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গ্রীষ্মের কিছু নির্দিষ্ট ফল রয়েছে যা এই সময় শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এসব ফল সহজলভ্য ও সুস্বাদু হওয়ায় প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত।
১. তরমুজ: পানিশূন্যতা প্রতিরোধে সেরা
তরমুজ গ্রীষ্মের সেরা ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম। এতে প্রায় ৯২% পানি থাকে যা শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখে। তরমুজে আছে লাইকোপিন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং সূর্যের অতিরিক্ত তাপের প্রভাবে সৃষ্ট কোষের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে। এটি হালকা, মিষ্টি ও সহজপাচ্য হওয়ায় প্রতিদিন একটি বাটি তরমুজ খাওয়া গ্রীষ্মকালীন ক্লান্তি কাটাতে সহায়ক। গ্রীষ্মের দুপুরে ঠান্ডা তরমুজ খেলে শরীর ও মনের প্রশান্তি মেলে।
২. আম: রাজাদের ফল, পুষ্টির আধার
গ্রীষ্মকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল আম। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি ও ই, আঁশ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। আম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এছাড়া এতে থাকা বিটা ক্যারোটিন চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক। তবে আম খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি, কারণ এটি মিষ্টি হওয়ায় অতিরিক্ত খেলে রক্তে চিনি বেড়ে যেতে পারে। প্রতিদিন ১টি মাঝারি আকারের আম খাওয়া যথেষ্ট পুষ্টি সরবরাহ করে।
৩. কাঁঠাল: শক্তি ও পুষ্টিতে ভরপুর
কাঁঠালকে আমাদের জাতীয় ফল বলা হয়, এবং এর পুষ্টিগুণও বিশাল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, পটাশিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। কাঁঠাল শরীরকে ঠান্ডা রাখতে এবং হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত হলেও প্রাকৃতিক চিনি থাকায় তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। দুপুরের খাবারের পর কয়েকটি কাঁঠালের কোয়া খেলে দীর্ঘসময় পেট ভরা অনুভূতি হয় এবং ক্লান্তি কাটে। তবে ডায়াবেটিস থাকলে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
৪. লিচু: শরীর ও ত্বকের জন্য উপকারী
লিচু গ্রীষ্মের আরেকটি সুস্বাদু ও উপকারী ফল। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, কপার, পটাশিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। লিচু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ও হজমে সহায়ক। তবে খেয়াল রাখতে হবে, অতিরিক্ত লিচু খেলে ডায়রিয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। প্রতিদিন ৬-৭টি লিচু খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে।
৫. জামরুল: পানির ঘাটতি পূরণে সহায়ক
জামরুল বা ওয়াটার অ্যাপল গ্রীষ্মে শরীর ঠান্ডা রাখতে এক অসাধারণ ফল। এটি মূলত ৯০% এরও বেশি পানি দিয়ে গঠিত, ফলে এটি দারুণভাবে শরীরের পানিশূন্যতা পূরণ করে। এতে ক্যালোরি কম, কিন্তু ভিটামিন সি ও আঁশ যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। জামরুল হজমে সাহায্য করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও নিরাপদ। এক গ্লাস ঠান্ডা পানির সঙ্গে কয়েকটি জামরুল দুপুরে খেলে শরীর বেশ ফুরফুরে লাগে।
৬. আনারস: হজম ও ত্বকের যত্নে
আনারস গ্রীষ্মের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফল, যাতে রয়েছে ব্রোমেলেইন নামক একটি এনজাইম যা হজম শক্তি উন্নত করে। এতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং ফ্রি র্যাডিক্যালসের বিরুদ্ধে কাজ করে। আনারস হালকা টক-মিষ্টি স্বাদের হওয়ায় গ্রীষ্মে শরীরের ক্লান্তি দূর করে ও তৃষ্ণা নিবারণ করে। তবে খালি পেটে খেলে কখনও কখনও এসিডিটির সমস্যা হতে পারে। প্রতিদিন এক কাপ আনারস খাওয়া উপকারী।
৭. বেল: ডায়রিয়া ও গ্যাসের প্রতিরোধে
বেল ফলকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হয়। এটি পেটের নানা সমস্যা যেমন ডায়রিয়া, বদহজম, গ্যাস ইত্যাদির প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। বেলের শরবত গ্রীষ্মকালে শরীর ঠান্ডা রাখতে এবং হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন সি, যা শরীরকে সতেজ রাখে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস বেলের শরবত খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
৮. পেঁপে: হজম ও ত্বকের বন্ধু
পেঁপে একটি বহুগুণসম্পন্ন ফল যা গ্রীষ্মকালে খাওয়ার জন্য খুবই উপযোগী। এতে থাকা প্যাপেইন নামক এনজাইম হজমে সহায়ক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পেঁপে ত্বকের জন্যও উপকারী, এটি ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং ব্রণের সমস্যা কমায়। এছাড়া এতে ভিটামিন সি, এ, এবং আঁশ রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পাকা পেঁপে কিংবা হালকা আধা-পাকা পেঁপে দুপুরে বা সন্ধ্যায় খাওয়া যেতে পারে।
৯. আঙুর: হৃদরোগ ও ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক
গ্রীষ্মে ক্লান্তি ও দুর্বলতা কাটাতে আঙুর অত্যন্ত কার্যকর। এতে রয়েছে রেসভেরাট্রল নামক উপাদান, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। আঙুরে প্রচুর পরিমাণে পানি ও গ্লুকোজ থাকে যা শরীরকে দ্রুত শক্তি দেয়। এই ফলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কোষের বার্ধক্য রোধে সহায়তা করে। বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ – সবাই আঙুর খেতে ভালোবাসে। তবে এটি খালি পেটে না খাওয়াই ভালো। গ্রীষ্মের দুপুরে একমুঠো আঙুর খেলে শরীর ফুরফুরে থাকে।
গ্রীষ্মে সুস্থ থাকতে হলে সঠিক খাবার গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। প্রাকৃতিক ফল গরমের সময় আমাদের দেহের জন্য যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনি সহজলভ্যও। উপরোক্ত ফলগুলো শুধু শরীরকে ঠান্ডা রাখে না, বরং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ক্লান্তি দূর করে এবং আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা পূরণে সহায়ক হয়। তাই এই গ্রীষ্মে স্বাস্থ্য ও সতেজতা বজায় রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ফল রাখুন।