১০:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
শিরোনাম :
মোহাম্মদপুরে মা–মেয়েকে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হচ্ছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ঢাকা-১১ আসনে নির্বাচন করবেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম থাই–কাম্বোডিয়া সীমান্তে পুনরায় উত্তেজনা: অস্ত্রবিরতি ভেঙে বিমান হামলা, নিহত ১ সৈন্য ইসির সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি দল জার্মান সেনাবাহিনী বাড়ছে: ২০৩৫ সালের মধ্যে ২,৬০,০০০ সক্রিয় সদস্যের লক্ষ্য অনুমোদন মধ্যপ্রাচ্যের কঠিনতম পানি প্রকল্প সম্পন্ন করল ইরান ফিনল্যান্ডে ডাটা সেন্টারের নির্গত  তাপে গরম হচ্ছে পুরো শহর চীন কোয়ান্টাম কম্পিউটারে সফলতা পেলে যুক্তরাষ্ট্রকে এক নিমেষে প্রস্তরযুগে পাঠিয়ে দেবে যুক্তরাষ্ট্রের F-35 যুদ্ধবিমান প্রকল্পে ফিরে আসার বিষয়ে আরো একধাপ এগিয়ে গেল তুরস্ক: এমনটাই জানিয়েছেন তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম ব্যারাক।

সাহিত্যের বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের জন্মদিন আজ

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৩:৪৬:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
  • / 168

ছবি সংগৃহীত

 

 

বাংলা সাহিত্যের বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জ জেলার রাঢ়িখাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই প্রথাবিরোধী মনীষা। কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভাষাবিজ্ঞান, সমালোচনা, রাজনীতি ভাষ্য, কিশোর সাহিত্য প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তিনি সৃষ্টি করেছেন আলাদা এক ধারা। সাহিত্যের ভুবনে তিনি ছিলেন এক সাহসী ও স্পষ্টভাষী বিদ্রোহী, যিনি প্রচলিত নিয়ম ভেঙে দিয়েছিলেন নিজের তীব্র কলমে।

বিজ্ঞাপন

ছাত্রজীবনে হুমায়ুন আজাদ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ১৯৬২ সালে রাঢ়িখাল স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিউশন থেকে পাকিস্তান অঞ্চলে ১৮তম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিক পাস করেন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (১৯৬৭) এবং স্নাতকোত্তর (১৯৬৮) ডিগ্রি অর্জন করেন। উভয় পরীক্ষায়ই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

শৈশবে লেখালেখির প্রতি ছিল তার গভীর অনুরাগ। ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ই শুরু করেছিলেন প্রথম উপন্যাস লেখা। বাড়ির উঠোনের কদম গাছ এবং তার বর্ষার রূপ তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল সাহিত্যচর্চায়। সেই সময় শরৎচন্দ্রের ‘গৃহদাহ’ ও ‘দত্তা’ পড়ে আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন।

হুমায়ুন আজাদের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘অলৌকিক ইস্টিমার’ (১৯৭৩) একটি কাব্যগ্রন্থ হলেও পরবর্তীতে ভাষাবিজ্ঞান গবেষণায় তিনি মনোনিবেশ করেন। ‘জ্বলো চিতাবাঘ’ (১৯৮০), ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’ (১৯৮৫), ‘যতোই গভীরে যাই মধু যতোই উপরে যাই নীল’ (১৯৮৭), ‘আমি বেঁচেছিলাম অন্যদের সময়ে’র (১৯৯০) মতো কাব্যগ্রন্থ তাঁকে কবিতাপ্রেমীদের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করে।

তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল’ প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক আলোড়ন তোলে। এরপর ‘সবকিছু ভেঙে পড়ে’ (১৯৯৫), ‘মানুষ হিসাবে আমার অপরাধসমূহ’ (১৯৯৬), ‘রাজনীতিবিদগণ’ (১৯৯৮), ‘কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ’ (১৯৯৯), ‘নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধ’ (২০০০), ‘ফালি ফালি করে কাঁটা চাঁদ’ (২০০১), ‘শ্রাবণের বৃষ্টিতে রক্তজবা’ (২০০২), ‘একটি খুনের স্বপ্ন’ (২০০৪), ‘পাকসার জমিন সাদ বাদ’ (২০০৪) সহ আরও অনেক আলোচিত উপন্যাস প্রকাশিত হয়।

তিনি বলতেন, “বই পড়ে কোনো নগদ লাভ হয় না। যারা রাষ্ট্র চালায়, তারা বই পড়ে না, কারণ এতে কোনো তাত্ক্ষণিক সুবিধা নেই। বরং পড়া একটি কষ্টকর কাজ। গুলশান-বারিধারার প্রাসাদ বই পড়ে ওঠে না।”

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে হুমায়ুন আজাদের উপর আক্রমণ চালায় ধর্মীয় উগ্রবাদীরা। পরে তাকে গুরুতর অবস্থায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়।

২০০৪ সালের ১১ আগস্ট রাতে জার্মানিতে একটি সাহিত্যিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে নিজ ফ্ল্যাটে ফেরেন। পরদিন ১২ আগস্ট ভোরে তাঁকে তার কক্ষে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সাহিত্যের এই দীপ্ত নক্ষত্রের অকাল প্রয়াণ বাংলা সাহিত্যকে অপূরণীয় শূন্যতায় নিমজ্জিত করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

সাহিত্যের বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের জন্মদিন আজ

আপডেট সময় ০৩:৪৬:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

 

 

বাংলা সাহিত্যের বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জ জেলার রাঢ়িখাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই প্রথাবিরোধী মনীষা। কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভাষাবিজ্ঞান, সমালোচনা, রাজনীতি ভাষ্য, কিশোর সাহিত্য প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তিনি সৃষ্টি করেছেন আলাদা এক ধারা। সাহিত্যের ভুবনে তিনি ছিলেন এক সাহসী ও স্পষ্টভাষী বিদ্রোহী, যিনি প্রচলিত নিয়ম ভেঙে দিয়েছিলেন নিজের তীব্র কলমে।

বিজ্ঞাপন

ছাত্রজীবনে হুমায়ুন আজাদ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ১৯৬২ সালে রাঢ়িখাল স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিউশন থেকে পাকিস্তান অঞ্চলে ১৮তম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিক পাস করেন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (১৯৬৭) এবং স্নাতকোত্তর (১৯৬৮) ডিগ্রি অর্জন করেন। উভয় পরীক্ষায়ই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

শৈশবে লেখালেখির প্রতি ছিল তার গভীর অনুরাগ। ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ই শুরু করেছিলেন প্রথম উপন্যাস লেখা। বাড়ির উঠোনের কদম গাছ এবং তার বর্ষার রূপ তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল সাহিত্যচর্চায়। সেই সময় শরৎচন্দ্রের ‘গৃহদাহ’ ও ‘দত্তা’ পড়ে আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন।

হুমায়ুন আজাদের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘অলৌকিক ইস্টিমার’ (১৯৭৩) একটি কাব্যগ্রন্থ হলেও পরবর্তীতে ভাষাবিজ্ঞান গবেষণায় তিনি মনোনিবেশ করেন। ‘জ্বলো চিতাবাঘ’ (১৯৮০), ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’ (১৯৮৫), ‘যতোই গভীরে যাই মধু যতোই উপরে যাই নীল’ (১৯৮৭), ‘আমি বেঁচেছিলাম অন্যদের সময়ে’র (১৯৯০) মতো কাব্যগ্রন্থ তাঁকে কবিতাপ্রেমীদের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করে।

তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল’ প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক আলোড়ন তোলে। এরপর ‘সবকিছু ভেঙে পড়ে’ (১৯৯৫), ‘মানুষ হিসাবে আমার অপরাধসমূহ’ (১৯৯৬), ‘রাজনীতিবিদগণ’ (১৯৯৮), ‘কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ’ (১৯৯৯), ‘নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধ’ (২০০০), ‘ফালি ফালি করে কাঁটা চাঁদ’ (২০০১), ‘শ্রাবণের বৃষ্টিতে রক্তজবা’ (২০০২), ‘একটি খুনের স্বপ্ন’ (২০০৪), ‘পাকসার জমিন সাদ বাদ’ (২০০৪) সহ আরও অনেক আলোচিত উপন্যাস প্রকাশিত হয়।

তিনি বলতেন, “বই পড়ে কোনো নগদ লাভ হয় না। যারা রাষ্ট্র চালায়, তারা বই পড়ে না, কারণ এতে কোনো তাত্ক্ষণিক সুবিধা নেই। বরং পড়া একটি কষ্টকর কাজ। গুলশান-বারিধারার প্রাসাদ বই পড়ে ওঠে না।”

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে হুমায়ুন আজাদের উপর আক্রমণ চালায় ধর্মীয় উগ্রবাদীরা। পরে তাকে গুরুতর অবস্থায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়।

২০০৪ সালের ১১ আগস্ট রাতে জার্মানিতে একটি সাহিত্যিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে নিজ ফ্ল্যাটে ফেরেন। পরদিন ১২ আগস্ট ভোরে তাঁকে তার কক্ষে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সাহিত্যের এই দীপ্ত নক্ষত্রের অকাল প্রয়াণ বাংলা সাহিত্যকে অপূরণীয় শূন্যতায় নিমজ্জিত করে।