০৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম :
নিজামী-মীর কাসেম-সালাউদ্দিন কাদেরকে মিথ্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে: মির্জা ফখরুল ২০২৩ সাল থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধের খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৯ থেকে ৬৭ বিলিয়ন ডলার। মার্কিন সেনা ও সিআইএ এজেন্টদের বহিষ্কারের চিন্তা কলম্বিয়া প্রেসিডেন্ট পেত্রোর পেন্টাগনের বড় চুক্তি পেল ট্রাম্পের ছেলের ড্রোন কোম্পানি কেন ট্রাম্প-পুতিনের বুদাপেস্ট বৈঠক বাতিল হলো? হুমকিতে বিশ্বব্যাপী পোলিও টিকাদান কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রকে ভেনেজুয়েলার হুঁশিয়ারি: “আমাদের হাতে ৫ হাজার রুশ ক্ষেপণাস্ত্র” সিইসির সঙ্গে বিএনপির বৈঠক বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, গভীর সমুদ্রে যাত্রা নিষেধ আতলেতিকোর জালে ১৪ মিনিটে ৪ গোল, দাপুটে জয়ে আর্সেনাল

নদী-হাওরের মৃত্যু আর মাছশূন্য জীবিকা: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলেদের হাহাকার

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১২:৫১:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫
  • / 215

ছবি সংগৃহীত

 

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নদী ও হাওরগুলো আজ যেন ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে। অব্যাহত দখল, দূষণ আর কৃত্রিম বাঁধে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রবাহ, হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক নাব্যতা। এর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে দেশীয় মাছের উৎপাদনে। এক সময় যে নদী-হাওরের মাছেই জেলেদের জীবন চলত, আজ সেখানে মাছ নেই বললেই চলে।

বিজ্ঞাপন

চলতি দশকে নদী-হাওরের গভীরতা কমে যাওয়া ও পানিদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জেলেরা বলছেন, কারেন্ট জাল, রিং জালসহ নিষিদ্ধ সরঞ্জাম ব্যবহার, মা-মাছ নিধন এবং হাওড় এলাকায় অবৈধ বাঁধ স্থাপন মাছের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে।

নাসিরনগরের মেদীর হাওরের জেলে নিরঞ্জন দাস জানান, “আগে বর্ষায় ঋণ করে জাল ফেললে মাছ উঠে আসত, এখন কেবল কাঁদা আর ময়লা ওঠে। বোয়াল, পুটি, বাইম সবই আজ স্মৃতি।”

ধীরেন্দ্র দাস, তিতাস নদীপাড়ের প্রবীণ জেলে, বলেন, “নদীতে আজ আর মাছ নেই, শুধু শহরের বর্জ্য জমে নদীটা সংকুচিত হয়ে গেছে। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।”

‘তরী বাংলাদেশ’ নামক নদী রক্ষা সংগঠনের আহ্বায়ক শামীম আহমেদ বলেন, “নদী দখল ও নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধ না করলে দেশীয় মাছ আর ফিরবে না। নদী ও হাওর রক্ষায় জরুরি উদ্যোগ দরকার।”

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন জানিয়েছেন, “নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। নদীর স্বাভাবিক স্রোত ও প্রজনন ক্ষেত্র রক্ষা করতে হবে।”

পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, নদীতে অবৈধ বাঁধ বা জলমহালে অনিয়ম দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে লিজ বাতিল, জরিমানা ও অভিযানে নামা হচ্ছে।

জেলেদের দাবি নদী খনন, মা-মাছ সংরক্ষণ, এবং জাল ব্যবহারে কঠোরতা আনলেই আবার ফিরবে দেশীয় মাছের হারানো ঐশ্বর্য। না হলে একদিন হয়তো ইতিহাসেই সীমাবদ্ধ থাকবে এই প্রাচীন পেশা।

নিউজটি শেয়ার করুন

নদী-হাওরের মৃত্যু আর মাছশূন্য জীবিকা: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলেদের হাহাকার

আপডেট সময় ১২:৫১:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫

 

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নদী ও হাওরগুলো আজ যেন ধীরে ধীরে মৃত্যুর পথে। অব্যাহত দখল, দূষণ আর কৃত্রিম বাঁধে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রবাহ, হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক নাব্যতা। এর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে দেশীয় মাছের উৎপাদনে। এক সময় যে নদী-হাওরের মাছেই জেলেদের জীবন চলত, আজ সেখানে মাছ নেই বললেই চলে।

বিজ্ঞাপন

চলতি দশকে নদী-হাওরের গভীরতা কমে যাওয়া ও পানিদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জেলেরা বলছেন, কারেন্ট জাল, রিং জালসহ নিষিদ্ধ সরঞ্জাম ব্যবহার, মা-মাছ নিধন এবং হাওড় এলাকায় অবৈধ বাঁধ স্থাপন মাছের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে।

নাসিরনগরের মেদীর হাওরের জেলে নিরঞ্জন দাস জানান, “আগে বর্ষায় ঋণ করে জাল ফেললে মাছ উঠে আসত, এখন কেবল কাঁদা আর ময়লা ওঠে। বোয়াল, পুটি, বাইম সবই আজ স্মৃতি।”

ধীরেন্দ্র দাস, তিতাস নদীপাড়ের প্রবীণ জেলে, বলেন, “নদীতে আজ আর মাছ নেই, শুধু শহরের বর্জ্য জমে নদীটা সংকুচিত হয়ে গেছে। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।”

‘তরী বাংলাদেশ’ নামক নদী রক্ষা সংগঠনের আহ্বায়ক শামীম আহমেদ বলেন, “নদী দখল ও নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধ না করলে দেশীয় মাছ আর ফিরবে না। নদী ও হাওর রক্ষায় জরুরি উদ্যোগ দরকার।”

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন জানিয়েছেন, “নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। নদীর স্বাভাবিক স্রোত ও প্রজনন ক্ষেত্র রক্ষা করতে হবে।”

পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, নদীতে অবৈধ বাঁধ বা জলমহালে অনিয়ম দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে লিজ বাতিল, জরিমানা ও অভিযানে নামা হচ্ছে।

জেলেদের দাবি নদী খনন, মা-মাছ সংরক্ষণ, এবং জাল ব্যবহারে কঠোরতা আনলেই আবার ফিরবে দেশীয় মাছের হারানো ঐশ্বর্য। না হলে একদিন হয়তো ইতিহাসেই সীমাবদ্ধ থাকবে এই প্রাচীন পেশা।