বরেণ্য সংগীতশিল্পী, কবি ও গবেষক মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই

- আপডেট সময় ১১:১৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
- / 22
বরেণ্য সংগীতশিল্পী, কবি ও গবেষক ড. মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। শনিবার (১০ মে) সকালে রাজধানীর বনানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তার কন্যা শারমিন আব্বাসী গণমাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন এই সাংস্কৃতিক পুরোধা।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী জন্মেছিলেন এক কিংবদন্তি সংগীত পরিবারে। তাঁর পিতা আব্বাস উদ্দীন আহমেদ ছিলেন পল্লীগীতির অগ্রদূত, যিনি বাংলার লোকসঙ্গীতকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করে তুলেছিলেন। চাচা আব্দুল করিম এবং বোন ফেরদৌসী রহমানও ছিলেন সংগীতের বিভিন্ন ধারার জনপ্রিয় ও সমাদৃত শিল্পী। বড় ভাই বিচারপতি মোস্তফা কামাল আইন অঙ্গনের খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর কন্যা নাশিদ কামাল নিজেও সংগীতাঙ্গনের পরিচিত মুখ।
ভারতের কোচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে ১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে কলকাতায়। পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে। শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতায় এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে বিএ অনার্স ও ১৯৬০ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে হার্ভার্ড গ্রুপ থেকে মার্কেটিং বিষয়েও অধ্যয়ন করেন তিনি।
সঙ্গীত সাধনার পাশাপাশি গবেষণায়ও রেখেছেন স্বকীয় অবস্থান। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় তিনি ফোক মিউজিক রিসার্চ গ্রুপের পরিচালক ছিলেন এবং সংগ্রহ করেছেন কয়েক হাজার বাংলা লোকগান, বিশেষ করে লালনের গান, ভাটিয়ালি, বিচ্ছেদী, ভাওয়াইয়া ও চটকা।
তিনি পঁচিশটিরও বেশি দেশে বাংলাদেশের লোকসঙ্গীত পরিবেশন করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত সম্মেলনে এবং ইউনেস্কোর ছায়ায় আয়োজিত সঙ্গীত অধিবেশনে একাধিকবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। দীর্ঘ ১১ বছর তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিটি অব মিউজিকের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ‘দুয়ারে আইসাছে পালকি’ ও ‘স্বাধীনতা দিনের গান’ তাঁর সম্পাদিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। কবি, লেখক ও গবেষক হিসেবে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ২১টি।
আজীবন বাংলা সংগীত, সাহিত্য ও সংস্কৃতির নিরলস সাধক মুস্তাফা জামান আব্বাসীর অবদান জাতি চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।