ঢাকা ১২:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে তিন পরিবর্তন বিএনপিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না: মির্জা ফখরুল প্রধান বিচারপতির বাসভবনের আশপাশে সভা-সমাবেশে ডিএমপির নিষেধাজ্ঞা বড় শয়তান এখনো আমাদের কাঁধে শ্বাস ফেলছে: তথ্য উপদেষ্টা কসবায় সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ভারতীয় শাড়ি উদ্ধার মাগুরা-ঝিনাইদহ সড়কে বাস-ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ১০ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু, একদিনে হাসপাতালে ৪২০ জন মানিকগঞ্জে নিজের মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে বাবার মৃত্যুদণ্ড মাদারগঞ্জে কলেজ ছাত্রকে ছুরিকাঘাতে হত্যা, চাচা লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে ‘নৌকা’ বাদ দিয়ে শাপলা প্রতীক তালিকাভুক্ত করার দাবি এনসিপির

মেঘনা তেতুলীয়ার ভাঙ্গনে দিশেহারা কয়েক হাজার মানুষ

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০৬:১৫:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
  • / 3

ছবি সংগৃহীত

 

 

বিধবা কাজল ভানু চার মেয়ে সহ সাত সন্তান নিয়ে নীলকমলের বাংলাবাজার এলাকার তেতুলিয়া নদীর পাড়ে স্বামীর ভিটায় ছিলেন।

তিন মাস আগে কোন এক রাতে জোয়ারের তাণ্ডবে তার তিন কাঠের ঘরটি তেতুলিয়া নদীতে ভেসে গেছে। স্থানীয়দের সহায়তায় সাত সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বেরিবাদের ভেতরের একটি বাড়িতে কয়েকদিনের ব্যবধানে কাজল ভানুর স্বামীর ভিটাও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ফলে বিশাল এই পৃথিবীতে কাজল ভানু এবং তার সাত সন্তানের নিজস্ব কোন ঠিকানা নেই এখন তারা ভাসমান মানুষ। ভোলার চরফ্যাশনের পশ্চিমাঞ্চলের তেতুলিয়া নদীর পূর্বপাড়ের চরকলমি, আহম্মদপুর এবং নীলকমল ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার তেতুলিয়ার ভাঙ্গনে কাজল ভানুর মত ঘর বাড়ি হারিয়ে ভাসমান মানুষে পরিণত হয়েছে। সর্বহারা এসব মানুষ এখন অন্যের বাড়িতে ওরকাত (আশ্রয়) থাকছেন এই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে তেতুলিয়া পাড়ের মানুষের মধ্যে নদীর ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর দেয়া তথ্যে জানা যায়, পশ্চিমাঞ্চলের তেতুলিয়া নদী পাড়ে নজরুল নগর ইউনিয়নের বাবুর হাট থেকে নীলকমল ইউনিয়নের কাশেম মিয়ার হাট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার বেরিবাঁধ রয়েছে। যার পুরোটাই ভাঙ্গন কবলিত। এরমধ্যে নজরুল নগর, চর কলমি এবং নীলকমল ইউনিয়নের ৫ কিলোমিটারে ব্লক ফেলা হয়েছে। বাকি ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকার ভাঙ্গন রোধে এখন পর্যন্ত টেকসই কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এই ১৫ কিলোমিটার বাঁধ এলাকার মধ্যে নীলকমলের বাংলাবাজার এলাকার পাঁচ কিলোমিটার বাঁধ এলাকা চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।এখানে ভয়াবহ ভাঙ্গনে রূপ নিয়েছে যেখানে গত তিন মাসে শত শত ঘর বাড়ি নদীতে হারিয়ে গেছে।

ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত কাজল ভানু বলেন, স্যার ছেলে এবং তিন মেয়ে নিয়ে ঘরেই ছিলাম স্বামী নাই রাতে জোয়ারের টানে ঘর ভেসে গেছে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভাসতে ভাসতে অন্যের বাড়িতে গিয়ে উঠেছি পরে ঘরের ভিটাও নদীতে ডুবে গেছে।

রহিমা বেগম নামের এক নারী বলেন, দুই বছর আগে নদীর বুকে বিলীন হয়ে যায় তার শেষ সম্বল ঘরবাড়ি ছেলেমেয়ে নিয়ে দুই বছর যাবত অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ছিলেন তিনি। গত দুই মাস আগে বাংলাবাজারের উত্তর পাশে বেরিবাঁধের বাহিরে এনজিও থেকে লোন নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেন। দুই মাসের ব্যবধানে তেতুলিয়ার ভয়াবহ ভাঙ্গনে নদী এখন তার ঘরের সামনে চলে এসেছে, এখন কোথায় যাব কি করব দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ।

মো.মোহন নামের এক দিনমজুর জানান, গাছে কাঁঠালসহ অনেক ফলফলাদি রয়েছে এসব ফল খেতে পারব কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আমরা সরকারের কাছে জোড়ার দাবি জানাই এডভোকেট সিদ্দিক উল্যাহ মিয়ার আবেদনটি আমলে নিয়ে দ্রুত ব্লক ফালানোর দাবি জানাই।

তিন ছেলেমেয়েসহ নিজের ঘরেই ছিলাম নদীতে ঘর বাড়ি হারিয়ে গেছে এখন ছেলে মেয়েরা একেকজন একেক জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে নদী আমার শুধু ঘর বাড়ি নেয়নি আমার ছেলেমেয়েদের ও ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত নূর নবী বলছেন তিন দফা ভাঙ্গনে এখন রাস্তার ফকির তিনি কদিন আগেও আশি শতাংশ জমির বাড়ি ও ঘর ছিল তার। এক রাতের ভাঙ্গনে সব শেষ হয়ে গেছে।

তেতুলিয়া পাড়ের নীলকমল ইউনিয়নের বাংলাবাজার থেকে গাছের খাল ঘোষেরহাট হয়ে চোর কর্মী বকশী পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকার নদী ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুল্লামিয়া এই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৩ জুন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এডভোকেট মোহাম্মদ সিদ্দিক উল্যাহ মিয়া বলেন,এই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিধি গত ২৩ জুন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক কে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা সর্বোচ্চ আদেশ দেয়া হয়েছে বলে আমি মনে করি। আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর উপ প্রকৌশলী আহসান আহম্মদ খান জানান, ভাঙ্গন রোদে যথাযথ ব্যবস্থার গ্রহণ করতে মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া তাই প্রকল্প গ্রহণের মধ্যবর্তী সময়ে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

মেঘনা তেতুলীয়ার ভাঙ্গনে দিশেহারা কয়েক হাজার মানুষ

আপডেট সময় ০৬:১৫:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

 

 

বিধবা কাজল ভানু চার মেয়ে সহ সাত সন্তান নিয়ে নীলকমলের বাংলাবাজার এলাকার তেতুলিয়া নদীর পাড়ে স্বামীর ভিটায় ছিলেন।

তিন মাস আগে কোন এক রাতে জোয়ারের তাণ্ডবে তার তিন কাঠের ঘরটি তেতুলিয়া নদীতে ভেসে গেছে। স্থানীয়দের সহায়তায় সাত সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বেরিবাদের ভেতরের একটি বাড়িতে কয়েকদিনের ব্যবধানে কাজল ভানুর স্বামীর ভিটাও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ফলে বিশাল এই পৃথিবীতে কাজল ভানু এবং তার সাত সন্তানের নিজস্ব কোন ঠিকানা নেই এখন তারা ভাসমান মানুষ। ভোলার চরফ্যাশনের পশ্চিমাঞ্চলের তেতুলিয়া নদীর পূর্বপাড়ের চরকলমি, আহম্মদপুর এবং নীলকমল ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার তেতুলিয়ার ভাঙ্গনে কাজল ভানুর মত ঘর বাড়ি হারিয়ে ভাসমান মানুষে পরিণত হয়েছে। সর্বহারা এসব মানুষ এখন অন্যের বাড়িতে ওরকাত (আশ্রয়) থাকছেন এই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে তেতুলিয়া পাড়ের মানুষের মধ্যে নদীর ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর দেয়া তথ্যে জানা যায়, পশ্চিমাঞ্চলের তেতুলিয়া নদী পাড়ে নজরুল নগর ইউনিয়নের বাবুর হাট থেকে নীলকমল ইউনিয়নের কাশেম মিয়ার হাট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার বেরিবাঁধ রয়েছে। যার পুরোটাই ভাঙ্গন কবলিত। এরমধ্যে নজরুল নগর, চর কলমি এবং নীলকমল ইউনিয়নের ৫ কিলোমিটারে ব্লক ফেলা হয়েছে। বাকি ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকার ভাঙ্গন রোধে এখন পর্যন্ত টেকসই কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এই ১৫ কিলোমিটার বাঁধ এলাকার মধ্যে নীলকমলের বাংলাবাজার এলাকার পাঁচ কিলোমিটার বাঁধ এলাকা চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।এখানে ভয়াবহ ভাঙ্গনে রূপ নিয়েছে যেখানে গত তিন মাসে শত শত ঘর বাড়ি নদীতে হারিয়ে গেছে।

ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত কাজল ভানু বলেন, স্যার ছেলে এবং তিন মেয়ে নিয়ে ঘরেই ছিলাম স্বামী নাই রাতে জোয়ারের টানে ঘর ভেসে গেছে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভাসতে ভাসতে অন্যের বাড়িতে গিয়ে উঠেছি পরে ঘরের ভিটাও নদীতে ডুবে গেছে।

রহিমা বেগম নামের এক নারী বলেন, দুই বছর আগে নদীর বুকে বিলীন হয়ে যায় তার শেষ সম্বল ঘরবাড়ি ছেলেমেয়ে নিয়ে দুই বছর যাবত অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ছিলেন তিনি। গত দুই মাস আগে বাংলাবাজারের উত্তর পাশে বেরিবাঁধের বাহিরে এনজিও থেকে লোন নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেন। দুই মাসের ব্যবধানে তেতুলিয়ার ভয়াবহ ভাঙ্গনে নদী এখন তার ঘরের সামনে চলে এসেছে, এখন কোথায় যাব কি করব দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ।

মো.মোহন নামের এক দিনমজুর জানান, গাছে কাঁঠালসহ অনেক ফলফলাদি রয়েছে এসব ফল খেতে পারব কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আমরা সরকারের কাছে জোড়ার দাবি জানাই এডভোকেট সিদ্দিক উল্যাহ মিয়ার আবেদনটি আমলে নিয়ে দ্রুত ব্লক ফালানোর দাবি জানাই।

তিন ছেলেমেয়েসহ নিজের ঘরেই ছিলাম নদীতে ঘর বাড়ি হারিয়ে গেছে এখন ছেলে মেয়েরা একেকজন একেক জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে নদী আমার শুধু ঘর বাড়ি নেয়নি আমার ছেলেমেয়েদের ও ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত নূর নবী বলছেন তিন দফা ভাঙ্গনে এখন রাস্তার ফকির তিনি কদিন আগেও আশি শতাংশ জমির বাড়ি ও ঘর ছিল তার। এক রাতের ভাঙ্গনে সব শেষ হয়ে গেছে।

তেতুলিয়া পাড়ের নীলকমল ইউনিয়নের বাংলাবাজার থেকে গাছের খাল ঘোষেরহাট হয়ে চোর কর্মী বকশী পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার এলাকার নদী ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুল্লামিয়া এই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৩ জুন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এডভোকেট মোহাম্মদ সিদ্দিক উল্যাহ মিয়া বলেন,এই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিধি গত ২৩ জুন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক কে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা সর্বোচ্চ আদেশ দেয়া হয়েছে বলে আমি মনে করি। আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর উপ প্রকৌশলী আহসান আহম্মদ খান জানান, ভাঙ্গন রোদে যথাযথ ব্যবস্থার গ্রহণ করতে মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া তাই প্রকল্প গ্রহণের মধ্যবর্তী সময়ে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।