ঢাকা ১২:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
শান্তি আলোচনার মধ্যেই রক্তাক্ত লড়াই: ইউক্রেন-রাশিয়া হামলা-পাল্টা হামলায় হতাহতের মিছিল জাতীয় নির্বাচনের আগে ৯ দফা সংস্কারে ইসির দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দিলেন ইসি সচিব ঈদে বাড়বে যৌথবাহিনীর তৎপরতা, অপরাধ দমনে জিরো টলারেন্সে থাকবে সরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শীর্ষ বৈঠকের সম্ভাবনা, ইউনূস-মোদি বৈঠকে ঢাকার আগ্রহ, দিল্লির সাড়া প্রতীক্ষায়: পররাষ্ট্রসচিব স্বাধীনতা দিবসে স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করলেন প্রধান উপদেষ্টা  বাংলাদেশে আসছে ৯০ দিনের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে স্টারলিংক ইন্টারনেট: বাণিজ্যিক সম্প্রচারে বড় অগ্রগতি জীবদ্দশায় জাতীয় পুরস্কার প্রদানের নিয়ম চালু করার প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান  গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আল-জাজিরাসহ দুই সাংবাদিক নিহত: জিএমওর তীব্র নিন্দা ভুতুড়ে টিআরপিতে বিপাকে টিভি চ্যানেল, জবাবদিহির দাবি গণমাধ্যম কমিশনের তামিম ইকবাল ভাল আছেন, শঙ্কা কিছুটা কমলেও সতর্ক থাকতে বললেন চিকিৎসকেরা

আরসা প্রধান আতাউল্লাহ গ্রেপ্তার, স্বস্তিতে রোহিঙ্গারা – কক্সবাজারে বাড়তি নিরাপত্তা জারি

খবরের কথা ডেস্ক

ছবি সংগৃহীত

 

রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্মার জুনুনীসহ ১০ সদস্যের গ্রেপ্তারের খবরে কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে স্বস্তির বাতাস বইছে। মঙ্গলবার রাতে তারাবির নামাজ শেষে বিভিন্ন মসজিদে রোহিঙ্গারা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্কে থাকা সাধারণ রোহিঙ্গারা এই গ্রেপ্তারকে সন্ত্রাস দমনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

নাশকতার পরিকল্পনা করতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে পৃথক অভিযানে আটক হন আরসার শীর্ষ নেতারা। র‍্যাব জানায়, গোপন বৈঠকের সময় তাঁদের ধরা হয়। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আতাউল্লাহকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিপুল পরিমাণ ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদের সন্ধান মিলতে পারে। সেই সঙ্গে শনাক্ত হবে তাঁদের পেছনে কারা অর্থ ও অস্ত্রের জোগান দিচ্ছে।

আরসার শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তারের পর সংগঠনটির শতাধিক সদস্য আশ্রয়শিবির ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছে বলে জানিয়েছে রোহিঙ্গা নেতারা। এতদিন মিয়ানমারের আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারেটি অর্গানাইজেশন (আরআরএসও) সহ ১০টির বেশি সন্ত্রাসী বাহিনী একজোট হয়ে আরসাকে প্রতিহত করছিল। এখন এই পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে আশ্রয়শিবিরে নতুন করে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কায় তল্লাশি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, দু’বছর আগেও আতাউল্লাহ পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতায় নেতৃত্ব দিতেন। এক বছর আগে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই শুরু হলে তিনি দলবল নিয়ে সেখানে আশ্রয় নেন এবং সরকারি বাহিনীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করেন।

গত বছরের নভেম্বরে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সদস্য আরাকান আর্মি বড় ধরনের হামলা চালিয়ে রাখাইনের ১৭টি শহরের মধ্যে ১৪টির নিয়ন্ত্রণ নেয়। কিন্তু আরসা ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাত থামেনি। ডিসেম্বরের ৭ তারিখে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপসহ ৮০ শতাংশ এলাকা দখলে নেয়, যার ফলে আতাউল্লাহর অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে।

২০১৮ সালে পুরো রোহিঙ্গা শিবিরের নিয়ন্ত্রণ ছিল আরসার হাতে। সাধারণ রোহিঙ্গারাও তাঁদের সহযোগিতা করতেন। কিন্তু রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় তাঁদের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। এরপর আরসা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও সম্প্রতি শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের ফলে ক্যাম্পে তাদের মনোবল ভেঙে পড়েছে। অনেকে অস্ত্র ফেলে পালানোর চেষ্টা করছে, অন্যদিকে আরআরএসওসহ অন্যান্য সন্ত্রাসীরা তাঁদের পালানো ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফলে নতুন করে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ও আগুনের কুণ্ডলী দেখা যায়। সীমান্তের লোকজন জানান, নাফ নদীর ওপার থেকে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছিল।
ধারণা করা হচ্ছে, আরসার ঘাঁটিতে আরাকান আর্মি বোমা হামলা চালিয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার আতাউল্লাহসহ অন্যদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১২:১৪:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
৫০৯ বার পড়া হয়েছে

আরসা প্রধান আতাউল্লাহ গ্রেপ্তার, স্বস্তিতে রোহিঙ্গারা – কক্সবাজারে বাড়তি নিরাপত্তা জারি

আপডেট সময় ১২:১৪:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

 

রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্মার জুনুনীসহ ১০ সদস্যের গ্রেপ্তারের খবরে কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে স্বস্তির বাতাস বইছে। মঙ্গলবার রাতে তারাবির নামাজ শেষে বিভিন্ন মসজিদে রোহিঙ্গারা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্কে থাকা সাধারণ রোহিঙ্গারা এই গ্রেপ্তারকে সন্ত্রাস দমনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

নাশকতার পরিকল্পনা করতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে পৃথক অভিযানে আটক হন আরসার শীর্ষ নেতারা। র‍্যাব জানায়, গোপন বৈঠকের সময় তাঁদের ধরা হয়। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আতাউল্লাহকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিপুল পরিমাণ ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদের সন্ধান মিলতে পারে। সেই সঙ্গে শনাক্ত হবে তাঁদের পেছনে কারা অর্থ ও অস্ত্রের জোগান দিচ্ছে।

আরসার শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তারের পর সংগঠনটির শতাধিক সদস্য আশ্রয়শিবির ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছে বলে জানিয়েছে রোহিঙ্গা নেতারা। এতদিন মিয়ানমারের আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারেটি অর্গানাইজেশন (আরআরএসও) সহ ১০টির বেশি সন্ত্রাসী বাহিনী একজোট হয়ে আরসাকে প্রতিহত করছিল। এখন এই পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে আশ্রয়শিবিরে নতুন করে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কায় তল্লাশি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, দু’বছর আগেও আতাউল্লাহ পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতায় নেতৃত্ব দিতেন। এক বছর আগে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির (এএ) লড়াই শুরু হলে তিনি দলবল নিয়ে সেখানে আশ্রয় নেন এবং সরকারি বাহিনীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করেন।

গত বছরের নভেম্বরে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সদস্য আরাকান আর্মি বড় ধরনের হামলা চালিয়ে রাখাইনের ১৭টি শহরের মধ্যে ১৪টির নিয়ন্ত্রণ নেয়। কিন্তু আরসা ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাত থামেনি। ডিসেম্বরের ৭ তারিখে আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপসহ ৮০ শতাংশ এলাকা দখলে নেয়, যার ফলে আতাউল্লাহর অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে।

২০১৮ সালে পুরো রোহিঙ্গা শিবিরের নিয়ন্ত্রণ ছিল আরসার হাতে। সাধারণ রোহিঙ্গারাও তাঁদের সহযোগিতা করতেন। কিন্তু রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় তাঁদের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। এরপর আরসা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও সম্প্রতি শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের ফলে ক্যাম্পে তাদের মনোবল ভেঙে পড়েছে। অনেকে অস্ত্র ফেলে পালানোর চেষ্টা করছে, অন্যদিকে আরআরএসওসহ অন্যান্য সন্ত্রাসীরা তাঁদের পালানো ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফলে নতুন করে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ও আগুনের কুণ্ডলী দেখা যায়। সীমান্তের লোকজন জানান, নাফ নদীর ওপার থেকে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছিল।
ধারণা করা হচ্ছে, আরসার ঘাঁটিতে আরাকান আর্মি বোমা হামলা চালিয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার আতাউল্লাহসহ অন্যদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।