ঢাকা ০২:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
ফেনীতে হ্যান্ডকাফসহ আসামির পলায়ন, স্বজনদের হামলায় আহত ৩ পুলিশ সদস্য গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন ট্রাম্প ইসির ওয়েবসাইট থেকে সরানো হলো আ. লীগের ‘নৌকা’ প্রতীক টেকনাফের গহীন পাহাড়ে বিজিবির অভিযান: অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার মেহেরপুর শহরে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু এআই দিয়ে ভুয়া তথ্যে প্রকাশে ফিলিপাইনে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তেজনা ১০টি বাসের মুক্তি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষতিপূরণ নিয়ে সমঝোতা আরও অঞ্চল দখলে নিতে চান পুতিন, বিচলিত নন ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞায় ডার্কসাইটে ৫.৫ কোটি নাগরিকের তথ্য ফাঁস, আসছে নতুন আইন: ফয়েজ আহমদ দুর্নীতি দমন কমিশনের নতুন সচিব হলেন মোহাম্মদ খালেদ রহীম

টানা চার মাস স্থবির টেকনাফ স্থলবন্দর, লোকসানে শতাধিক ব্যবসায়ী ও শ্রমিক

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১২:০৪:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
  • / 9

ছবি সংগৃহীত

 

 

কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে টানা চার মাস ধরে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। গুদামে পড়ে থেকে পচে গেছে কোটি টাকার পণ্য, আর বেকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক। বিষয়টি নিয়ে কোনো লিখিত নোটিশ পাননি সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তারাও।

সরেজমিনে টেকনাফ স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো এলাকা ফাঁকা পড়ে আছে। মাঠে নেই কোনো পণ্যের উপস্থিতি, নাফ নদীর জেটিও এখন পণ্যবোঝাই ট্রলার ও জাহাজশূন্য। বন্দরের চারপাশে ছাগল ও হাঁস পালনের দৃশ্য যেন বন্দরের প্রাণহীনতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। বন্ধ রয়েছে গোডাউনের দরজাগুলো, নেই ব্যবসায়ীদের আনাগোনা।

ব্যবসায়ীরা জানান, রফতানির জন্য গুদামে রাখা কোটি টাকার সিমেন্ট ও আলু নষ্ট হয়ে গেছে। হঠাৎ সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেলেও তারা জানেন না এর প্রকৃত কারণ। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শতাধিক আমদানি-রফতানিকারক।

এক্সপ্রেস এজেন্সির প্রতিনিধি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে দখলদার আরাকান আর্মির অনুমতি না থাকায় পণ্য রফতানি সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি, মিয়ানমার থেকেও কোনো পণ্য আসতে দেয়া হচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীরা চরম দুরবস্থায় পড়েছেন। এখন দুই দেশের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে হস্তক্ষেপ জরুরি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গোডাউনে থাকা সিমেন্ট ও আলুসহ খাদ্যপণ্যগুলো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে, এতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আব্দুল্লাহ জানান, ‘আমাদের পনেরোটি ট্রাকভর্তি আলু বন্দরে আটকে ছিল, সবই এখন নষ্ট। বন্দরের আশপাশে থাকা দোকানগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে, কারণ বন্দর শ্রমিকদের চলাচল নেই।’

শ্রমিক সর্দার আলম বলেন, ‘টেকনাফ স্থলবন্দরে দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। গত চার-পাঁচ মাস ধরে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সবাই বেকার হয়ে পড়েছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে।’

রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সোহেল উদ্দিন জানান, ২২-২৩ অর্থ বছরে টেকনাফ বন্দর থেকে ৬৪০ কোটি টাকা, ২৩-২৪ সালে ৪০৪ কোটি এবং চলতি ২৪-২৫ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। কিন্তু গত চার মাসে এক টাকাও রাজস্ব আসেনি। বন্দর বন্ধের কারণ নিয়েও কোনো অফিসিয়াল তথ্য তার কাছে নেই।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ খোকা বলেন, ‘টেকনাফ স্থলবন্দর দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উৎস। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান জরুরি, তাহলে ব্যবসা আবার সচল হবে।’

উল্লেখ্য, চোরাচালান প্রতিরোধ ও বৈধ বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য শুরু হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

টানা চার মাস স্থবির টেকনাফ স্থলবন্দর, লোকসানে শতাধিক ব্যবসায়ী ও শ্রমিক

আপডেট সময় ১২:০৪:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

 

 

কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে টানা চার মাস ধরে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। গুদামে পড়ে থেকে পচে গেছে কোটি টাকার পণ্য, আর বেকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক। বিষয়টি নিয়ে কোনো লিখিত নোটিশ পাননি সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তারাও।

সরেজমিনে টেকনাফ স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো এলাকা ফাঁকা পড়ে আছে। মাঠে নেই কোনো পণ্যের উপস্থিতি, নাফ নদীর জেটিও এখন পণ্যবোঝাই ট্রলার ও জাহাজশূন্য। বন্দরের চারপাশে ছাগল ও হাঁস পালনের দৃশ্য যেন বন্দরের প্রাণহীনতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। বন্ধ রয়েছে গোডাউনের দরজাগুলো, নেই ব্যবসায়ীদের আনাগোনা।

ব্যবসায়ীরা জানান, রফতানির জন্য গুদামে রাখা কোটি টাকার সিমেন্ট ও আলু নষ্ট হয়ে গেছে। হঠাৎ সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেলেও তারা জানেন না এর প্রকৃত কারণ। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শতাধিক আমদানি-রফতানিকারক।

এক্সপ্রেস এজেন্সির প্রতিনিধি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে দখলদার আরাকান আর্মির অনুমতি না থাকায় পণ্য রফতানি সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি, মিয়ানমার থেকেও কোনো পণ্য আসতে দেয়া হচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীরা চরম দুরবস্থায় পড়েছেন। এখন দুই দেশের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে হস্তক্ষেপ জরুরি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গোডাউনে থাকা সিমেন্ট ও আলুসহ খাদ্যপণ্যগুলো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে, এতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আব্দুল্লাহ জানান, ‘আমাদের পনেরোটি ট্রাকভর্তি আলু বন্দরে আটকে ছিল, সবই এখন নষ্ট। বন্দরের আশপাশে থাকা দোকানগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে, কারণ বন্দর শ্রমিকদের চলাচল নেই।’

শ্রমিক সর্দার আলম বলেন, ‘টেকনাফ স্থলবন্দরে দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। গত চার-পাঁচ মাস ধরে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সবাই বেকার হয়ে পড়েছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে।’

রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সোহেল উদ্দিন জানান, ২২-২৩ অর্থ বছরে টেকনাফ বন্দর থেকে ৬৪০ কোটি টাকা, ২৩-২৪ সালে ৪০৪ কোটি এবং চলতি ২৪-২৫ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। কিন্তু গত চার মাসে এক টাকাও রাজস্ব আসেনি। বন্দর বন্ধের কারণ নিয়েও কোনো অফিসিয়াল তথ্য তার কাছে নেই।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ খোকা বলেন, ‘টেকনাফ স্থলবন্দর দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম উৎস। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান জরুরি, তাহলে ব্যবসা আবার সচল হবে।’

উল্লেখ্য, চোরাচালান প্রতিরোধ ও বৈধ বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্য শুরু হয়।