জলবায়ু পরিবর্তনে যারা ঝুঁকির মধ্যে আছেন তাদের জয়

- আপডেট সময় ১১:২০:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
- / 14
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যারা খুবই ঝুঁকির মধ্যে আছেন, তাদের জন্য বিজয়ের খবর হচ্ছে ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের’ রায়। বুধবার দেয়া রায়ে বলা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোগে এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোগে এক দেশের বিরুদ্ধে আরেক দেশের মামলা করার পথ ঐতিহাসিক এক রায়ের মাধ্যমে খুলে দিয়েছে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত।
জাতিসংঘের ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের’ (আইসিজে) বিচারক বুধবারের রায়ে এও বলেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কোন অংশের জন্য কে দায়ী, সেই ফয়সালা করাটা জটিল হয়ে উঠতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যারা খুবই ঝুঁকির মধ্যে আছেন, এ রায় তাদের একটা বিজয় হিসেবে ধরা হচ্ছে, যারা সমস্যা সমাধানের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় অগ্রগতি না আসার হতাশায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, আইসিজেতে প্রথমবারের মত এ ধরনের মামলা করার উদ্যোগটি ছিল প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের একদল তরুণ আইন শিক্ষার্থীর, যারা ২০১৯ সালে ধারণাটি সামনে আনেন।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ভানুয়াতুর ফ্লোরা ভ্যানো বলেন, “আজ ভালো ঘুম হবে। আইসিজে আমাদের সার্বিক পরিস্থিতি— আমাদের ভোগান্তি, আমাদের সহনশীলতা এবং ভবিষ্যতের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের যেসব অঞ্চল বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে, ভানুয়াতু সেগুলোর একটি।
ফ্লোরা ভ্যানো বলেন, “এ রায় শুধু আমাদের বিজয় নয়, এটি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি গোষ্ঠীর বিজয়।”
আইসিজে বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে বিবেচিত এবং পুরো বিশ্বেই তাদের বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।
জলবায়ু নিয়ে সোচ্চার ব্যক্তি ও আইনজীবীরা মনে করেছেন, যুগের পর যুগ ধরে যারা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়িয়েছেন, এ রায়ের ফলে তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করাটা সহজ হবে।
অনেক গরিব দেশ হতাশা থেকে এ মামলায় সমর্থন জানিয়েছিল।
এসব দেশের অভিযোগ, ধনী রাষ্ট্রগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারছে না।
যুক্তরাজ্যসহ উন্নত দেশগুলো বলছে, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিসহ যেসব সমঝোতা হয়েছে, সেগুলোই যথেষ্ট। এ বিষয়ে নতুন করে আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপ করা ঠিক হবে না।
বুধবারের রায়ে আদালত অবশ্য এমন যুক্তি বাতিল করে দিয়েছে।
বিচারক আওয়াসা ওয়াইউজি এটাও বলেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ধনী দেশগুলো যদি সবচেয়ে কাঙ্খিত পরিকল্পনা গড়ে না তোলে, তাহলে সেটাও প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিচারক বলেন, যেসব দেশ প্যারিস চুক্তিতে সই করেনি, কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মতো যেসব দেশ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে চায়, তাদেরও জলবায়ু ব্যবস্থাসহ পরিবেশ সুরক্ষায় কাজ করতে হবে।
আদালতের এসব পর্যবেক্ষণ মূলত পরামর্শমূলক। তবে অতীতে অনেক সরকার আইসিজের একাধিক রায় বাস্তবায়ন করেছে। যেমন— গেল বছর রায় মেনে মরিশাসকে একটি দ্বীপপুঞ্জ বুঝিয়ে দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
‘সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ল’র (সিআইইএল) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়ী চৌধুরী বলেন, “এ রায় ঐতিহাসিক। প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে এসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত আজ যুগান্তকারী একটা রায় দিয়েছে।
“আদালত বলে দিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যারা ভুগছেন, তাদের ক্ষতিপূরণসহ প্রতিকার পাওয়ার অধিকার আছে।”