তীব্র গরম থেকে বাঁচতে কাজে দেবে যে উপায়গুলো
বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত গ্রীষ্মকালে তীব্র গরমের সমস্যা বেড়েই চলেছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। তাই এই তীব্র গরমে সুস্থ থাকার উপায় জানাটা একান্তই জরুরি হয়ে উঠেছে। এই গরম থেকে সুরক্ষা না পেলে স্বাস্থ্যের নানা ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। এখানে আমরা তীব্র গরমের সময় শরীর সুস্থ রাখার কিছু উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। এটি শুধু আপনাকে গরম থেকে বাঁচার উপায় জানাতেই সাহায্য করবে না, বরং তীব্র গরমে করণীয় সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে। এই ধরনের সমস্যাগুলি এড়াতে তীব্র গরম থেকে বাঁচার জন্য কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। আসুন, তীব্র গরম থেকে বাঁচার উপায়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
তীব্র গরম থেকে বাঁচার উপায়
তীব্র গরম থেকে বাঁচার কিছু কার্যকর পদ্ধতি অবলম্বন করে শরীরকে সুস্থ রাখা সম্ভব। নিম্নে সেগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. পানি বেশি পান করুনঃ তীব্র গরমে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পর্যাপ্ত পানি পান করা। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ডিহাইড্রেশন রোধ করতে দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। পানি কেবল পিপাসা মেটায় না, বরং এটি ত্বককে সুস্থ রাখে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়া কোল্ড ড্রিঙ্কসের পরিবর্তে তাজা ফলের রস, নারকেল পানি, লেবুর শরবত পান করতে পারেন।
২. নিয়মিত খাবার স্যালাইন গ্রহণ করুনঃ গরমের সময় ঘামের সাথে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবন বের হতে থাকে যার ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। বিকেল বেলা খাবার স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত গরমেও শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। আবার অনেকেই স্বাদযুক্ত স্যালাইন খান যেমন, টেস্টি স্যালাইন। ভুল করেও এসব খাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো ওরস্যালাইন। তবে আপনাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা খাবার স্যালাইন খাওয়ার আগে ভালো কোনো ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিনঃ প্রচন্ড গরমের সময় শরীরের উপর প্রচুর চাপ পড়ে, ফলে ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। তীব্র গরমের মধ্যে শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরি। বিশ্রাম আমাদের শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার করে এবং হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করে। গরমের দিনে কাজের চাপ কমানোর জন্য মাঝে মাঝে বিরতি নিন। এজন্য দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো উচিত। ঘুম আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
৪. টক জাতীয় ফল খাওয়াঃ প্রচুর গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। যেমন: কামরাঙ্গা, লেবু, তেতুল, আমড়া ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত টক ফল খাওয়া ঠিক নয়। যদি কারো এসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তবে টক জাতীয় ফল খাওয়া হতে বিরত থাকুন। টক জাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে করে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পড়তে পাবেন।
৫. ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুনঃ খুব বেশি গরম হলে যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন। এসি বা পাখার বাতাসে থাকা বা হালকা বাতাসে থাকা গেলে শরীরের জন্য ভালো। ছায়াযুক্ত স্থানে অবস্থান করলে শরীর দ্রুত ঠাণ্ডা হয় এবং গরমের প্রভাব কমে যায়।
৬. হালকা এবং আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুনঃ গরমের সময় হালকা এবং আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা অত্যন্ত জরুরি। সুতির কাপড় যেমন ত্বকের সাথে সহজে মিশে যায় এবং ঘামের শুষ্কতার জন্য সহায়ক হয়। এই ধরনের পোশাকগুলো সাধারণত হালকা রঙের হয়, যা সূর্যের রশ্মি প্রতিফলিত করতে সাহায্য করে। তাছাড়া, ঢিলেঢালা পোশাক বায়ু চলাচল বাড়ায়, ফলে গরম কম অনুভূত হয়। গরমের সময় আরামদায়ক পোশাক পরিধান করলে শরীর সুস্থ থাকে এবং গরমের অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৭. বাইরে বের হওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুনঃ অত্যধিক গরমে বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে। সরাসরি সূর্যের আলোতে দাঁড়ানো উচিত নয়। ছাতা বা ক্যাপ ব্যবহার করুন এবং সানস্ক্রিন লাগিয়ে বাইরে বের হতে পারেন।
৮. ডায়েটের প্রতি মনোযোগ দিনঃ অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ অনেক সময় ভারী এবং মশলাদার খাবার। গ্রীষ্মকালে হালকা ও সুষম খাবার খাওয়া উচিত। শাকসবজি, ফলমূল, এবং তাজা খাবার খেলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে। ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত তেল চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়।
৯. ধূমপান পরিত্যাগ করাঃ আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিনা ধূমপান করে থাকি। ধূমপান করলে শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। তাই প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। যদিও এই অভ্যাসটি সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। তাই যতটুকু পারেন ধূমপান কম করার চেষ্টা করুন।
১০. শোবার ঘর ঠান্ডা রাখুনঃ সবচেয়ে বেশি সময় কাটানো হয় শোয়ার ঘরের। সারাদিনের কাজ শেষে একটু স্বস্তি পেটে শোয়ার ঘরটি ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন। তাই তীব্র রোদের সময়টুকুতে ঘরে যাতে সরাসরি তাপ প্রবেশ না করে সেদিকে নজর দিন। দিনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে ঘরের পর্দা টেনে রাখুন।
১১. শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতি:
১. ঠাণ্ডা পানিতে স্নান করুন।
২. শসা, তরমুজের মতো জলীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিন।
৩ গরমে ঘরে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবেশ করতে দিন, ঘরের জানালা খুলে রাখতে পারেন।
১২. যোগব্যায়াম ও হালকা শরীরচর্চাঃ তীব্র গরমে শরীরকে সুস্থ রাখতে যোগব্যায়াম ও হালকা শরীরচর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন সকালে কিছু সময় যোগব্যায়াম করলে শ্বাস প্রশ্বাসের উন্নতি হয় এবং মনকে শান্ত করে। এর ফলে শরীরে তাপমাত্রার প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে। হালকা শরীরচর্চা যেমন হাঁটা বা সাইক্লিংও করতে পারেন। এভাবে ঘাম বেরিয়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। সঠিক ডায়েটের পাশাপাশি নিয়মিত যোগ ও শরীরচর্চা আপনাকে তীব্র গরমের প্রভাব থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে।
তীব্র গরম থেকে বাঁচতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। প্রচন্ড গরমে সুস্থ থাকার উপায়গুলি মেনে চললে গরমের তীব্রতা থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আমাদের সবার উচিত গরমে সচেতন থাকা এবং তীব্র গরমে করণীয় বিষয়গুলি অনুসরণ করা।