ঢাকা ০২:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুন্দরবনে ফের বনদস্যুর আতঙ্ক, কোস্টগার্ডের কঠোর অভিযানে স্বস্তি জেলেদের

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ০১:০৩:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • / 8

ছবি সংগৃহীত

 

সুন্দরবন যেন আবারও ফিরে যাচ্ছে পুরোনো আতঙ্কের দিনে। দস্যুবাহিনীর আত্মসমর্পণের পর কিছুদিন স্বস্তিতে ছিল উপকূলীয় জনপদ, তবে সাম্প্রতিক সময়ে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে নতুন বনদস্যু চক্র। এতে করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল হাজারো জেলে, মৌয়াল ও বাওয়ালিরা।

বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে শতাধিক বনদস্যু আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে একাধিক দফায় করিম, রাহেল, দয়ালসহ মোট ১৫টির বেশি বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করেছিল। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও সম্প্রতি নতুন নামে গড়ে ওঠা দস্যু দলগুলো আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

গত তিন মাসে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ২০ জন জেলে ও মৌয়াল অপহরণ হয়েছে বলে জানা গেছে। মুক্তিপণ হিসেবে চাওয়া হয়েছে ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। বেশ কয়েকটি সফল অভিযানে কোস্টগার্ড অপহৃতদের উদ্ধার করতে পারলেও আতঙ্ক কাটছে না বনজীবীদের।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বর্তমানে করিম শরীফ, দয়াল বাহিনীসহ অন্তত ৫-৭টি নতুন ডাকাত দল বনাঞ্চলের গহীনে ঘাঁটি গেড়ে দস্যুতা চালাচ্ছে। তারা নৌকায় চড়ে বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে হঠাৎ করে ট্রলার আক্রমণ করে জেলেদের অপহরণ করে। এরপর নির্জন ডেরায় নিয়ে চালায় অমানবিক নির্যাতন। মুক্তিপণের টাকা না দিলে অনেক সময় প্রাণনাশ পর্যন্ত ঘটছে।

এক ভুক্তভোগী জেলে বলেন, ‘দয়াল বাহিনী এখন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। ওরা দিনে-দুপুরে ট্রলারে উঠে পড়ে, মারধর করে, অপহরণ করে। টাকা না পেলে খুন করতেও দ্বিধা করে না।’

সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, বনদস্যুরা সাধারণ পোশাকে সুন্দরবনে ঢুকে দস্যুতা করে। এদের চিহ্নিত করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে একটি ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। একইসাথে গোয়েন্দা নজরদারি, পরিবারের উপর পর্যবেক্ষণ এবং বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে গেল ১০ এপ্রিল করিম বাহিনীর কবল থেকে ৬ নারীসহ ৩৩ জেলেকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। এর আগে অস্ত্রসহ কয়েকজন দস্যু গ্রেফতারও হয়েছে।

কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত রাখতে আগের মতো ভবিষ্যতেও কঠোর তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

সুন্দরবনের নিরাপত্তা এখন কেবল একটি আইনশৃঙ্খলা ইস্যু নয়, এটি জাতীয় পরিবেশ ও অর্থনীতিরও প্রশ্ন। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই ঐতিহাসিক বনাঞ্চল ও তার ওপর নির্ভরশীল মানুষের ভবিষ্যৎ ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

সুন্দরবনে ফের বনদস্যুর আতঙ্ক, কোস্টগার্ডের কঠোর অভিযানে স্বস্তি জেলেদের

আপডেট সময় ০১:০৩:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

 

সুন্দরবন যেন আবারও ফিরে যাচ্ছে পুরোনো আতঙ্কের দিনে। দস্যুবাহিনীর আত্মসমর্পণের পর কিছুদিন স্বস্তিতে ছিল উপকূলীয় জনপদ, তবে সাম্প্রতিক সময়ে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে নতুন বনদস্যু চক্র। এতে করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল হাজারো জেলে, মৌয়াল ও বাওয়ালিরা।

বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে শতাধিক বনদস্যু আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে একাধিক দফায় করিম, রাহেল, দয়ালসহ মোট ১৫টির বেশি বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করেছিল। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও সম্প্রতি নতুন নামে গড়ে ওঠা দস্যু দলগুলো আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

গত তিন মাসে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ২০ জন জেলে ও মৌয়াল অপহরণ হয়েছে বলে জানা গেছে। মুক্তিপণ হিসেবে চাওয়া হয়েছে ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। বেশ কয়েকটি সফল অভিযানে কোস্টগার্ড অপহৃতদের উদ্ধার করতে পারলেও আতঙ্ক কাটছে না বনজীবীদের।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বর্তমানে করিম শরীফ, দয়াল বাহিনীসহ অন্তত ৫-৭টি নতুন ডাকাত দল বনাঞ্চলের গহীনে ঘাঁটি গেড়ে দস্যুতা চালাচ্ছে। তারা নৌকায় চড়ে বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে হঠাৎ করে ট্রলার আক্রমণ করে জেলেদের অপহরণ করে। এরপর নির্জন ডেরায় নিয়ে চালায় অমানবিক নির্যাতন। মুক্তিপণের টাকা না দিলে অনেক সময় প্রাণনাশ পর্যন্ত ঘটছে।

এক ভুক্তভোগী জেলে বলেন, ‘দয়াল বাহিনী এখন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। ওরা দিনে-দুপুরে ট্রলারে উঠে পড়ে, মারধর করে, অপহরণ করে। টাকা না পেলে খুন করতেও দ্বিধা করে না।’

সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, বনদস্যুরা সাধারণ পোশাকে সুন্দরবনে ঢুকে দস্যুতা করে। এদের চিহ্নিত করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে একটি ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। একইসাথে গোয়েন্দা নজরদারি, পরিবারের উপর পর্যবেক্ষণ এবং বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে গেল ১০ এপ্রিল করিম বাহিনীর কবল থেকে ৬ নারীসহ ৩৩ জেলেকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। এর আগে অস্ত্রসহ কয়েকজন দস্যু গ্রেফতারও হয়েছে।

কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত রাখতে আগের মতো ভবিষ্যতেও কঠোর তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

সুন্দরবনের নিরাপত্তা এখন কেবল একটি আইনশৃঙ্খলা ইস্যু নয়, এটি জাতীয় পরিবেশ ও অর্থনীতিরও প্রশ্ন। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই ঐতিহাসিক বনাঞ্চল ও তার ওপর নির্ভরশীল মানুষের ভবিষ্যৎ ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।