ভারতের বিপক্ষে ৩৭১ রান তাড়া করে টেস্ট জিতে ইংল্যান্ডের বাজবল কীর্তি

- আপডেট সময় ১১:২৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
- / 17
জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩৭১ রান। চতুর্থ দিন বিকেলে দুই ওপেনার জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেট ২১ রান তুলে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। সামনে শেষ দিন, টেস্টের পঞ্চম দিনে ৩৫০ রান তাড়া ক্রিকেট ইতিহাসে যা প্রায় অকল্পনীয়। বিশেষ করে প্রতিপক্ষে যখন থাকেন জসপ্রিত বুমরাহর মতো বিধ্বংসী পেসার, যিনি প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। যদি ভারতীয় ফিল্ডাররা চারটি ক্যাচ মিস না করতেন, তবে তার নামের পাশে লেখা থাকতো ৯ উইকেট!
তবু এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালো ইংল্যান্ড। পঞ্চম দিন টেস্টে ৩৫০ রান তাড়া করার দুঃসাহস দেখালো তারা। আর এই দুঃসাহসিক অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন সেই দুই চেনা মুখ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও বেন স্টোকস। একজন কোচ, অন্যজন অধিনায়ক; দু’জনেই নিউজিল্যান্ডের ঘরানায় গড়া। ইংল্যান্ড টেস্ট দলের হাল এখন তাদের হাতে। হার মানে না, এমন দর্শনে বিশ্বাসী এই যুগল টেস্ট ক্রিকেটে নিয়ে এসেছেন ‘বাজবল’ নামে এক নতুন বিপ্লব।
এই বাজবল দর্শনে ভর করেই ইংল্যান্ড আগেও অনেক অসাধ্য সাধন করেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ভারতের ৩৭১ রান তাড়া করে ৫ উইকেটে জয় ছিনিয়ে নিল তারা। সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।
এই হারের জন্য শুধু ভারতের ব্যাটারদের দায়ী করা যাবে না। কারণ ভারতীয় ব্যাটাররা এই ম্যাচে করেছেন পাঁচটি শতরান। প্রথম ইনিংসে শতরান করেন যসস্বি জয়সওয়াল, শুভমান গিল ও রিশাভ পান্ত। দ্বিতীয় ইনিংসে শতরান এসেছে লোকেশ রাহুল ও পান্তের ব্যাট থেকে। টেস্টের ১৪৮ বছরের ইতিহাসে এত শতরান করেও কোনো দল এর আগে হারেনি।
তবু ভারত হেরেছে, কারণ ফিল্ডিং ছিল অত্যন্ত দুর্বল। ম্যাচ জুড়ে সাতটি ক্যাচ মিস করেছে ভারত। এর মধ্যে চারটি একাই ছেড়েছেন জয়সওয়াল। পান্ত মিস করেছেন দুটি, জাদেজা একটি। জয়সওয়ালের চারটি ক্যাচ মিসের জন্য ইংল্যান্ডকে ১৬৬ রান উপহার দিতে হয়েছে। শুধু ক্যাচই নয়, বেশ কিছু সহজ বাউন্ডারি ছেড়ে দেওয়া, রান আটকে রাখতে না পারাও চাপ কমিয়েছে ইংলিশ ব্যাটারদের ওপর।
অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের পক্ষে প্রথম ইনিংসে শতরান করেন অলি পোপ, দ্বিতীয় ইনিংসে বেন ডাকেট। হ্যারি ব্রুক করেন ৯৯ রান, এক রানের জন্য শতরান হাতছাড়া হয় তার।
এই ম্যাচের পরিসংখ্যান অনেক পুরনো ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেয়। ১৯৪৮ সালে অস্ট্রেলিয়া লিডসেই ৪০৪ রান তাড়া করে জয় পেয়েছিল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তবে এবার ইংল্যান্ড যা করলো, তা আধুনিক যুগের অন্যতম বড় ক্রিকেট বিস্ময়।
এবার প্রশ্ন উঠছে ভারতের ফিল্ডিং কোচ টি দিলীপের ভূমিকা নিয়েও। যিনি প্রতিটি ম্যাচ শেষে ‘সেরা ফিল্ডার’কে পদক দেন, এবার হয়তো তাকে খারাপ ফিল্ডিংয়ের জন্য জরিমানার নিয়ম ভেবে দেখতে হবে!
হেডিংলিতে এমন টেস্ট হার, যেখানে শতরানের বন্যা বইলেও জয় অধরাই এই ম্যাচ ভারতের জন্য এক বেদনাদায়ক শিক্ষা হয়ে রইলো। আর ইংল্যান্ডের জন্য আরও এক বাজবল জয়গাথা।