চিকিৎসাবিজ্ঞানে মাইলফলক: তিন ডিএনএর সমন্বয়ে ৮ শিশুর জন্ম, জিনগত ব্যাধির সমাধান

- আপডেট সময় ১২:৪১:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
- / 6
যুক্তরাজ্যে তিন ব্যক্তির জেনেটিক উপাদান ব্যবহার করে জন্ম নিয়েছে আটটি শিশু, যা মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ প্রতিরোধে এক যুগান্তকারী চিকিৎসা পদ্ধতির সাফল্যের গল্প বলছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে জন্ম নেয়া শিশুরা এখন পর্যন্ত সুস্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে শিশুর প্রধান ডিএনএ আসে মা ও বাবার কাছ থেকে, তবে প্রায় ০.১ শতাংশ জেনেটিক উপাদান যোগ হয় তৃতীয় এক নারীর সুস্থ ডিম্বাণু থেকে। মূলত মায়ের ত্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়া প্রতিস্থাপন করতেই এই ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। এতে সন্তান হয় মা-বাবার, কিন্তু বংশগত মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ থেকে থাকে নিরাপদ।
নিউক্যাসলের একটি বিশেষায়িত ফার্টিলিটি সেন্টারে এই চিকিৎসা সম্পন্ন হয়। এখানে মা ও ডোনারের ডিম্বাণু এবং বাবার শুক্রাণু একত্রে নিষিক্ত করে ‘প্রো-নিউক্লিয়াস’ নামক জিনগত কাঠামো তৈরি করা হয়। এরপর তা স্থানান্তর করা হয় সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া-যুক্ত ডোনারের নিষিক্ত ডিম্বাণুতে। এভাবেই তৈরি হয় একটি উন্নত ও নিরাপদ ভ্রূণ।
এ ধরনের চিকিৎসায় জন্ম নেওয়া এক কন্যাশিশুর মা বলেন, “বছরের পর বছর অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটিয়ে এই প্রযুক্তি আমাদের আশার আলো দেখিয়েছিল। আজ আমাদের কোলে একটি প্রাণবন্ত শিশু এ যেন স্বপ্নপূরণ।”
আরেক সন্তানের মা জানান, “এই অসাধারণ প্রযুক্তি ও সহায়তায় আমাদের পরিবার এখন পরিপূর্ণ। মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগের বোঝা আজ কেবলই অতীত।”
গবেষণা বলছে, প্রতি পাঁচ হাজার শিশুর মধ্যে একজন মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ নিয়ে জন্মায়। এসব রোগে কোষ পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদন করতে না পারায় দেখা দেয় হৃদরোগ, খিঁচুনি, অন্ধত্বসহ গুরুতর জটিলতা। অধিকাংশ শিশুই জন্মের কিছু দিনের মধ্যেই মারা যায়।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, নিউক্যাসল ফার্টিলিটি সেন্টারে ২২টি পরিবার এই চিকিৎসা গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত জন্ম নিয়েছে চার ছেলে ও চার মেয়ে, যার মধ্যে একটি যমজ জুটি রয়েছে। আরও এক মায়ের গর্ভাবস্থা এখনো চলমান।
সব শিশু এখন পর্যন্ত মাইটোকন্ড্রিয়াল রোগ থেকে মুক্ত ও স্বাভাবিক রয়েছে। যদিও এক শিশুর খিঁচুনি ও অন্য শিশুর হৃৎস্পন্দনে অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে, তবে তা চিকিৎসাধীন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদ্ধতি মানব জাতির জিনগত ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যদিও বিতর্ক আছে, কারণ মাইটোকন্ড্রিয়াতে থাকা ডিএনএ ভবিষ্যৎ প্রজন্মেও সঞ্চারিত হতে পারে।
তবে গবেষকরা জোর দিচ্ছেন, এটি কোনো ডিজাইনার বেবি তৈরির চেষ্টা নয় বরং জীবন রক্ষায় এক বিপ্লবী চিকিৎসা।
নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যার ডাগ টার্নবুল বলেন, “আইন, গবেষণা ও এনএইচএসের সমর্থন একত্র করে যুক্তরাজ্য যা করেছে, তা এক অনন্য অর্জন। আমাদের সামনে এখন আছে আটটি সুস্থ শিশু এ এক বাস্তব সাফল্যের প্রতীক।”