ঢাকা ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
সবুজবাগে বিদেশী পিস্তল ও গুলিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি তুরস্কে স্কি রিসোর্টে অগ্নিকাণ্ড: মালিকসহ ৯ জন গ্রেপ্তার ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ চিটাগং কিংসকে উড়িয়ে দিয়ে ঢাকা ক্যাপিটালসের টানা তৃতীয় জয়   গাজায় ব্যর্থতার দায়ে পদত্যাগের প্রস্তুতিতে শিন বেত প্রধান রনেন বার যেসব পণ্যে ভ্যাট কমালো এনবিআর গাজায় ব্যর্থতার দায়ে এবার পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত-এর প্রধান রনেন বার। পুতিনের ভূমিকা নিয়ে ট্রাম্পের উদ্বেগ, নতুন নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত: বৈদেশিক সহায়তায় ৯০ দিনের সাময়িক স্থগিতাদেশ ইতালি থেকে আসা সেই বিমানে তল্লাশির পর যা জানা গেল

ইউরোপ কিংবা উত্তর আমেরিকার মতো

বাংলাদেশে তুষারপাত বা বরফ পড়া সম্ভব কি?

খবরের কথা ডেস্ক

শীত আসলেই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশে কেন তুষারপাত হয় না। ইউরোপ-আমেরিকাতে তুষারপাত হতো নিত্য দিনের পরিচিত ঘটনা। এমনি কী পাশের দেশ ভারত, নেপাল ও চীন এর বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে হিমালয় সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর তুষারপাত হয়। এজন্য সবার মনে একটা কমন প্রশ্ন বাংলাদেশে কেন এমনটা হয় না। এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার পাঁচশত সত্তর বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশ একটা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশ। নানা ভৌগলিক কারণে এই দেশে আসলে কখনোই তুষারপাত হয় না। কেন হয় না, এর মূল কারণ কী? দুই শব্দে এর উত্তর হলো তাপমাত্রার পার্থক্য। ইউরোপ-আমেরিকাতে শীতকালে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির অনেক নীচের দিকে চলে যায় বলে পশ্চিমা ওইসব দেশে তুষার পরে। কারণ তুষার এবং বৃষ্টি তৈরির পদ্ধতি আসলে একই। শুধুমাত্র ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রার ভিন্নতার কারণে সেখানে তুষার পরে আর বাংলাদেশে শীতকালে বৃষ্টির সাথে বরফ কণা তথা তুষারপাত হয় না।

বাংলাদেশে তুষারপাতের সম্ভাবনা কতটুকু, সেই প্রশ্নে যাওয়ার আগে জানতে হবে, তুষারপাতটা কী এবং এর সাথে পানি চক্রের সম্পর্কটা কী? পানি চক্রের নিয়ম অনুযায়ী সূর্যের তাপে সাগর, নদী, খাল-বিল বা পুকুরের পানি বাষ্পীভূত হয়ে ভূপৃষ্ঠে থেকে অনেক উপরে উঠে যায়। পানি বাষ্পীভূত হয়ে এইভাবে উপরে ওঠারও একটি কারণ রয়েছে। সাধারণত যে বস্তু তুলনামূলক হালকা, সেটি উপরের দিকে উঠতে চায়। জলীয় বাষ্প বাতাসের চেয়ে হালকা। তাই উপরে উঠে যায় জলীয় বাষ্প। যত উপরের দিকে যাওয়া যায়, তাপমাত্রাও তত কমতে থাকে। অবশ্য, উপরে ওঠারও একটা সীমা আছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১ কিলোমিটার উপরে অর্থাৎ Troposphere এর শেষ পর্যন্ত যাওয়ার পর বাতাসে জলীয় বাষ্পের ধারণক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে শুরু হয় নতুন অঞ্চলের, এই অঞ্চলকে বলা হয় Stratosphere। সেখানকার বায়ুতে থাকে প্রচুর ধূলিকণা। জলীয় বাষ্পের সঙ্গে ধূলিকণা মিশে তা ভারী হয়ে যায়। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা আরও কমলে তুষারপাতে পরিণত হয়। তাই বাতাসের তুলনায় তুষারপাত আরও ভারী হয়ে যায়। বাতাস আর ওগুলোকে ধরে রাখতে পারে না। তুষারকণা ঝরে পড়ে ভূপৃষ্ঠে। আসলে আকাশে যখন তুষারকণা তৈরি হয়, তখন সেগুলো সব জায়গায় সমানভাবেই পড়ে। কিন্তু কোন অঞ্চলে তুষারপাত হবে আর কোন অঞ্চলে হবে না, তা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রার ওপর। মূলত তুষারপাত হওয়ার জন্য যেকোনো দেশের তাপমাত্রা নামতে হবে হিমাঙ্কের নিচে। অর্থাৎ শূন্য ডিগ্রির নিচে থাকতে হবে তাপমাত্রা। বাংলাদেশের তাপমাত্রা কখনোই ও হিমাঙ্কের নিচে নামেনি। দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২০১৮ সালে তেঁতুলিয়ায়, ২.৬ ডিগ্রি। যেহেতু দেশের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে নামে না, তাই তুষারপাত বা বরফও পড়ে না।

ছবিঃ সংগৃহীত

তাপমাত্রার সঙ্গে তুষারপাত, বৃষ্টি ও শিলা বৃষ্টির একটা দারুন সম্পর্ক রয়েছে। আগেই বলেছি পানি চক্রের মাধ্যমে কিভাবে জলীয় বাষ্প তৈরী হয়। এই জলীয়বাষ্প বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে উঠে যায়। উল্লেখ্য জলীয় বাষ্পের সঙ্গে অনেক ধূলি কণাও থাকে, এই ধূলিকণাগুলোকে আশ্রয় করে বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে ঠাণ্ডা হওয়া বাষ্পরা মেঘ তৈরি করে এই মেঘ ঠাণ্ডা এবং ঘনীভূত হয়। এরপর উপযুক্ত পরিবেশ পেলে একদিন মাটিতে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে। তুষারের ক্ষেত্রেও এটাই হয় শুধু পার্থক্য হচ্ছে জলীয়বাষ্প যে পরিবেশে গিয়ে জমাট বাঁধে তার থেকে তুষারের জমাট বাধার পরিবেশ অনেক বেশী শীতল হয়। এক্ষেত্রে আগে ধূলিকণাটিই প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় আগে বরফ হয়ে যায়। তারপর সেই বরফের গায়ে জলীয়বাষ্পের অণু যুক্ত হয়। সেই অণু সরাসরি বরফ হয়ে যায়। মূলত এভাবেই শীতের দেশে জলীয়বাষ্প পানি না হয়ে সোজা বরফ হয়ে যায়। বরফ হতে গিয়ে বরফ কুচির খুব দারুণ কিছু আকার নেয় যেটাকে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন স্নো ফ্লেক্স। এখন কথা হলো শিল বা শিলা কেন তুষার নয়। শীলের ক্ষেত্রেও আসলে বরফ হয় তবে এই ক্ষেত্রে বাষ্প ধূলিকণার উপর ভর করে শুরুতেই বরফ হয় না, আগে পানিই হয়। এরপর এই পানি মেঘের মধ্যে ঠাণ্ডা হয়ে বরফ হয়। তাই শিলা বৃষ্টিতে দেখবে আস্ত আস্ত বরফ পরে যেগুলোর নির্দিষ্ট কোনো আকার বা আকৃতি নেই।

বাংলাদেশে তুষারপাত বা বরফ পড়া সম্ভব কি?
ছবিঃ সংগৃহীত

আমরা আগেই জেনেছি কিভাবে তুষারপাত সৃষ্টি হয়। আকাশে সৃষ্ট তুষারপাত ভূপৃষ্ঠের সব জায়গায় সমানভাবে তুষারকণা পড়ে। এরপর যে দেশে তাপমাত্রা কম (যেমন কানাডা), সে দেশে তুষারকণা বরফ আকারেই থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাভাবিক ও গড় তাপমাত্রা যেহেতু ২৫ ডিগ্রির উপরে, তাই তুষারকণা গলে পানিতে পরিণত হয়। ফলে তুষারপাতের পরিবর্তে বাংলাদেশে হয় বৃষ্টি। শুরুতেই বলেছি তুষারকণা ও বৃষ্টিকণা একই। কোনোটা বরফ আকারে পড়ে আর কোনোটা পড়ে পানি আকারে। বাংলাদেশে তুষারপাত না হলেও গ্রীষ্মকালে শিলা বৃষ্টি হয় মাঝেমধ্যেই। বাংলাদেশে কি কখনো তুষারপাত হয়েছিল বা ভবিষ্যতে কি দেশে তুষারপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে? বাংলাদেশে কোনো দিন তুষারপাত হয়নি, এমনকি হওয়া সম্ভবও নয়। কারণ, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ওই ২.৬ ডিগ্রি। এখানে একটা বিষয় নিশ্চয় খেয়াল করেছ। বারবার স্বাধীন দেশের কথা বলছি। এর একটা কারণ আছে। পৃথিবীতে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার বছর আগে ছিল বরফযুগ। তখন সম্পূর্ণ পৃথিবীই নিমজ্জিত ছিল বরফে। তখন বাংলাদেশের এই ভূখণ্ডও নিশ্চিতভাবে বরফে ঢাকা ছিল। কথা হলো, ভবিষ্যতে দেশে বরফ পড়ার সম্ভাবনা কতটুকু? একটা ব্যাপার নিশ্চিত, শূন্য ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নামলেই তুষারপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বর্তমানে বৈশ্বিক জলবায়ুর যে অবস্থা, তাতে নিশ্চিতভাবে বলা যায় না যে দেশের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নামবে না। গবেষকদের মতে, সামনের দিনগুলোতে হয়তো হিমালয় সংলগ্ন বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে বিশেষ করে পঞ্চগড়ের দিকে তুষারপাত হলেও হতে পারে। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর মতো ভারী তুষারপাত নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৮:৩০:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
৫৬১ বার পড়া হয়েছে

ইউরোপ কিংবা উত্তর আমেরিকার মতো

বাংলাদেশে তুষারপাত বা বরফ পড়া সম্ভব কি?

আপডেট সময় ০৮:৩০:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

শীত আসলেই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশে কেন তুষারপাত হয় না। ইউরোপ-আমেরিকাতে তুষারপাত হতো নিত্য দিনের পরিচিত ঘটনা। এমনি কী পাশের দেশ ভারত, নেপাল ও চীন এর বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে হিমালয় সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর তুষারপাত হয়। এজন্য সবার মনে একটা কমন প্রশ্ন বাংলাদেশে কেন এমনটা হয় না। এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার পাঁচশত সত্তর বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশ একটা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশ। নানা ভৌগলিক কারণে এই দেশে আসলে কখনোই তুষারপাত হয় না। কেন হয় না, এর মূল কারণ কী? দুই শব্দে এর উত্তর হলো তাপমাত্রার পার্থক্য। ইউরোপ-আমেরিকাতে শীতকালে তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির অনেক নীচের দিকে চলে যায় বলে পশ্চিমা ওইসব দেশে তুষার পরে। কারণ তুষার এবং বৃষ্টি তৈরির পদ্ধতি আসলে একই। শুধুমাত্র ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রার ভিন্নতার কারণে সেখানে তুষার পরে আর বাংলাদেশে শীতকালে বৃষ্টির সাথে বরফ কণা তথা তুষারপাত হয় না।

বাংলাদেশে তুষারপাতের সম্ভাবনা কতটুকু, সেই প্রশ্নে যাওয়ার আগে জানতে হবে, তুষারপাতটা কী এবং এর সাথে পানি চক্রের সম্পর্কটা কী? পানি চক্রের নিয়ম অনুযায়ী সূর্যের তাপে সাগর, নদী, খাল-বিল বা পুকুরের পানি বাষ্পীভূত হয়ে ভূপৃষ্ঠে থেকে অনেক উপরে উঠে যায়। পানি বাষ্পীভূত হয়ে এইভাবে উপরে ওঠারও একটি কারণ রয়েছে। সাধারণত যে বস্তু তুলনামূলক হালকা, সেটি উপরের দিকে উঠতে চায়। জলীয় বাষ্প বাতাসের চেয়ে হালকা। তাই উপরে উঠে যায় জলীয় বাষ্প। যত উপরের দিকে যাওয়া যায়, তাপমাত্রাও তত কমতে থাকে। অবশ্য, উপরে ওঠারও একটা সীমা আছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১ কিলোমিটার উপরে অর্থাৎ Troposphere এর শেষ পর্যন্ত যাওয়ার পর বাতাসে জলীয় বাষ্পের ধারণক্ষমতা কমে যায়। সেখান থেকে শুরু হয় নতুন অঞ্চলের, এই অঞ্চলকে বলা হয় Stratosphere। সেখানকার বায়ুতে থাকে প্রচুর ধূলিকণা। জলীয় বাষ্পের সঙ্গে ধূলিকণা মিশে তা ভারী হয়ে যায়। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা আরও কমলে তুষারপাতে পরিণত হয়। তাই বাতাসের তুলনায় তুষারপাত আরও ভারী হয়ে যায়। বাতাস আর ওগুলোকে ধরে রাখতে পারে না। তুষারকণা ঝরে পড়ে ভূপৃষ্ঠে। আসলে আকাশে যখন তুষারকণা তৈরি হয়, তখন সেগুলো সব জায়গায় সমানভাবেই পড়ে। কিন্তু কোন অঞ্চলে তুষারপাত হবে আর কোন অঞ্চলে হবে না, তা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রার ওপর। মূলত তুষারপাত হওয়ার জন্য যেকোনো দেশের তাপমাত্রা নামতে হবে হিমাঙ্কের নিচে। অর্থাৎ শূন্য ডিগ্রির নিচে থাকতে হবে তাপমাত্রা। বাংলাদেশের তাপমাত্রা কখনোই ও হিমাঙ্কের নিচে নামেনি। দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২০১৮ সালে তেঁতুলিয়ায়, ২.৬ ডিগ্রি। যেহেতু দেশের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নিচে নামে না, তাই তুষারপাত বা বরফও পড়ে না।

ছবিঃ সংগৃহীত

তাপমাত্রার সঙ্গে তুষারপাত, বৃষ্টি ও শিলা বৃষ্টির একটা দারুন সম্পর্ক রয়েছে। আগেই বলেছি পানি চক্রের মাধ্যমে কিভাবে জলীয় বাষ্প তৈরী হয়। এই জলীয়বাষ্প বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে উঠে যায়। উল্লেখ্য জলীয় বাষ্পের সঙ্গে অনেক ধূলি কণাও থাকে, এই ধূলিকণাগুলোকে আশ্রয় করে বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে ঠাণ্ডা হওয়া বাষ্পরা মেঘ তৈরি করে এই মেঘ ঠাণ্ডা এবং ঘনীভূত হয়। এরপর উপযুক্ত পরিবেশ পেলে একদিন মাটিতে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে। তুষারের ক্ষেত্রেও এটাই হয় শুধু পার্থক্য হচ্ছে জলীয়বাষ্প যে পরিবেশে গিয়ে জমাট বাঁধে তার থেকে তুষারের জমাট বাধার পরিবেশ অনেক বেশী শীতল হয়। এক্ষেত্রে আগে ধূলিকণাটিই প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় আগে বরফ হয়ে যায়। তারপর সেই বরফের গায়ে জলীয়বাষ্পের অণু যুক্ত হয়। সেই অণু সরাসরি বরফ হয়ে যায়। মূলত এভাবেই শীতের দেশে জলীয়বাষ্প পানি না হয়ে সোজা বরফ হয়ে যায়। বরফ হতে গিয়ে বরফ কুচির খুব দারুণ কিছু আকার নেয় যেটাকে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন স্নো ফ্লেক্স। এখন কথা হলো শিল বা শিলা কেন তুষার নয়। শীলের ক্ষেত্রেও আসলে বরফ হয় তবে এই ক্ষেত্রে বাষ্প ধূলিকণার উপর ভর করে শুরুতেই বরফ হয় না, আগে পানিই হয়। এরপর এই পানি মেঘের মধ্যে ঠাণ্ডা হয়ে বরফ হয়। তাই শিলা বৃষ্টিতে দেখবে আস্ত আস্ত বরফ পরে যেগুলোর নির্দিষ্ট কোনো আকার বা আকৃতি নেই।

বাংলাদেশে তুষারপাত বা বরফ পড়া সম্ভব কি?
ছবিঃ সংগৃহীত

আমরা আগেই জেনেছি কিভাবে তুষারপাত সৃষ্টি হয়। আকাশে সৃষ্ট তুষারপাত ভূপৃষ্ঠের সব জায়গায় সমানভাবে তুষারকণা পড়ে। এরপর যে দেশে তাপমাত্রা কম (যেমন কানাডা), সে দেশে তুষারকণা বরফ আকারেই থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাভাবিক ও গড় তাপমাত্রা যেহেতু ২৫ ডিগ্রির উপরে, তাই তুষারকণা গলে পানিতে পরিণত হয়। ফলে তুষারপাতের পরিবর্তে বাংলাদেশে হয় বৃষ্টি। শুরুতেই বলেছি তুষারকণা ও বৃষ্টিকণা একই। কোনোটা বরফ আকারে পড়ে আর কোনোটা পড়ে পানি আকারে। বাংলাদেশে তুষারপাত না হলেও গ্রীষ্মকালে শিলা বৃষ্টি হয় মাঝেমধ্যেই। বাংলাদেশে কি কখনো তুষারপাত হয়েছিল বা ভবিষ্যতে কি দেশে তুষারপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে? বাংলাদেশে কোনো দিন তুষারপাত হয়নি, এমনকি হওয়া সম্ভবও নয়। কারণ, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ওই ২.৬ ডিগ্রি। এখানে একটা বিষয় নিশ্চয় খেয়াল করেছ। বারবার স্বাধীন দেশের কথা বলছি। এর একটা কারণ আছে। পৃথিবীতে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার বছর আগে ছিল বরফযুগ। তখন সম্পূর্ণ পৃথিবীই নিমজ্জিত ছিল বরফে। তখন বাংলাদেশের এই ভূখণ্ডও নিশ্চিতভাবে বরফে ঢাকা ছিল। কথা হলো, ভবিষ্যতে দেশে বরফ পড়ার সম্ভাবনা কতটুকু? একটা ব্যাপার নিশ্চিত, শূন্য ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নামলেই তুষারপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বর্তমানে বৈশ্বিক জলবায়ুর যে অবস্থা, তাতে নিশ্চিতভাবে বলা যায় না যে দেশের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নামবে না। গবেষকদের মতে, সামনের দিনগুলোতে হয়তো হিমালয় সংলগ্ন বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে বিশেষ করে পঞ্চগড়ের দিকে তুষারপাত হলেও হতে পারে। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর মতো ভারী তুষারপাত নয়।