শবে কদরের রাতে যে ৫টি আমল অবশ্যই করবেন
মাহে রমজানের এক মহিমান্বিত রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এই রাতকে বলা হয় লাইলাতুল কদর। যদি কেউ এই রাতের ইবাদতের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে, তবে আল্লাহ তাআলা তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সাথে, সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে এবং শবে কদরের রাতে ইবাদত করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারি)
হাদিসে বলা হয়েছে, রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর সন্ধান করতে হবে। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি বলেছেন, “তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর খুঁজে নিও।” (বুখারি ২০১৭, মুসলিম ১১৬৯)
লাইলাতুল কদরে করণীয় ইবাদত
১. এশা ও ফজর নামাজ জামাতে আদায় করাঃ অনেকে রাতভর নফল ইবাদতে মশগুল থাকেন, কিন্তু ফরজ নামাজের জামাতের প্রতি গুরুত্ব দেন না। অথচ নফল ইবাদতের চেয়ে ফরজ নামাজ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতে পড়ে, সে যেন পুরো রাত নামাজ আদায় করল।” (মুসলিম ৬৫৬) তাই শবে কদরে অন্তত এশা ও ফজর নামাজ জামাতে পড়ার চেষ্টা করতে হবে।
২. রাত জেগে ইবাদত করাঃ লাইলাতুল কদরে রাত জেগে ইবাদত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে ইবাদত করবে, তার আগের ও পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে।” (মুসনাদ আহমাদ ২২৭১৩)
৩. ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকাঃ লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট দিন উল্লেখ করা হয়নি। একবার রাসুল (সা.) সাহাবিদের জানাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু দুজন মুসলমানের ঝগড়ার কারণে তা গোপন রাখা হয়।
হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, “আমি তোমাদের লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানাতে এসেছিলাম, কিন্তু অমুক-অমুক ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হওয়ায় সেই জ্ঞান উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।” (বুখারি ৪৯) তাই শবে কদরের ফজিলত থেকে বঞ্চিত না হতে হলে ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে থাকা জরুরি।
৪. সালাতুত তাসবিহ নামাজ আদায় করাঃ শবে কদরের রাতে সালাতুত তাসবিহ পড়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার চাচা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে এই নামাজ শিখিয়ে বলেছেন, “এই নামাজ পড়লে আল্লাহ তাআলা আগের ও পরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।” (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
এই নামাজ চার রাকাত বিশিষ্ট। প্রতি রাকাতে ৭৫ বার করে মোট ৩০০ বার নিম্নের তাসবিহ পাঠ করতে হয়
سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ للهِ، وَلَا إلَهَ إلّا اللهُ، وَاللهُ أكْبَر উচ্চারণ: “সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার”
অর্থ: “মহা পবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, আর আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ।”
৫. গুনাহ মাফের দোয়া করাঃ রমজানের শেষ দশকের যেকোনো রাতই লাইলাতুল কদর হতে পারে। তাই এসব রাতে বেশি বেশি ইবাদত ও দোয়া করা উচিত। হযরত আয়েশা (রা.) একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, “হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি জানতে পারি, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তবে আমি কী দোয়া করবো?”
তখন নবীজি (সা.) তাকে এই দোয়াটি পড়তে বলেন
اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّ উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম; তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি”
অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ও ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।” (তিরমিজি ৩৫১৩)
লাইলাতুল কদরের রাত অতি পুণ্যময়। এই রাতে যথাযথ ইবাদত করলে হাজার মাসের ইবাদতের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। তাই আমাদের উচিত, শবে কদর সন্ধানে সচেষ্ট হওয়া এবং আল্লাহর রহমত লাভের আশায় এই রাতে ইবাদতে মশগুল থাকা।