গাজায় সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরাইলি হামলায় নিহত আরোও ৩৬ ফিলিস্তিনি

- আপডেট সময় ১২:৩২:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
- / 14
গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় খাদ্যের খোঁজে সহায়তার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর আবারও হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৬ জন, আহত হয়েছেন আরও ২০০-এর বেশি। এই হামলাকে ‘অমানবিক ও উদ্দেশ্যমূলক’ আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, সকালবেলা ক্ষুধার তাড়নায় অসহায় মানুষগুলো সহায়তার লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ করেই ড্রোন ও ট্যাংক থেকে নির্বিচারে গুলি চালানো হয় তাদের ওপর। নিহতদের মধ্যে শিশু, নারী এবং বৃদ্ধও ছিলেন যাদের হাতে ছিল কেবল খাবারের ব্যাগ।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা কেবল সতর্কতামূলক গুলি ছুঁড়েছে। তবে বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফিলিস্তিনিরা বলছে, যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই ইচ্ছাকৃতভাবে এই হামলা চালিয়ে মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে ইসরাইল।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির আলোচনার পেছনে ইসরাইলি বাহিনীর এই সহিংসতা একটি স্পষ্ট বার্তা বহন করে তারা শান্তি নয়, সংঘাতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায়।
এদিকে গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত খাদ্য সহায়তা পদ্ধতি নিয়েও উঠছে সমালোচনার ঝড়। জাতিসংঘ ও একাধিক আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা এই ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সেনা নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর মধ্যে সহায়তা বিতরণ মানবিক সহায়তার নিরপেক্ষতা লঙ্ঘন করছে এবং মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
গাজায় চলমান মানবিক সংকট আরও গভীরতর হচ্ছে প্রতিদিনই। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার ঘাটতির মধ্যেই ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকা এখন এক যুদ্ধ। এর মধ্যেই বারবার সহায়তা নিতে গিয়ে এমন প্রাণঘাতী হামলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
অন্যদিকে, ইসরাইলি রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এক নজির স্থাপন করেছে যুক্তরাজ্যসহ পাঁচটি দেশ। প্রথমবারের মতো তারা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইসরাইলের দুই কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রীর ওপর। নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ ও নিরাপত্তা-বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরকে। যুক্তরাজ্যে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং সেখানকার তাদের সম্পদও জব্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিয়েছেন এবং গাজা থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ে এই নিষেধাজ্ঞায় সায় দিয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাজনৈতিক উসকানির দায়ে ইসরাইলি নেতাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের প্রতিফলন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
গাজা উপত্যকায় এভাবে বারবার সহায়তা নিতে গিয়ে মৃত্যুর মুখে পড়া মানুষগুলোর জন্য এখন দরকার জরুরি আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ নয়তো মানবতার এই ট্র্যাজেডি থামানো কঠিন হবে।