ঐতিহ্যের ছোঁয়া আর উৎসবের রঙ নিয়ে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত হলো ড্রাগন বোট ফেস্টিভাল

- আপডেট সময় ০৭:৪৮:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
- / 1
হংকংয়ে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয়েছে বার্ষিক ড্রাগন বোট ফেস্টিভাল। স্থানীয় সময় শনিবার (৩১ মে) এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবে প্রাণ ফিরে পায় পুরো শহর। আবেরডিন বন্দরে শতাব্দীপ্রাচীন এই চীনা সংস্কৃতিকে ঘিরে বসে বর্ণিল এই আয়োজন, যেখানে অংশ নেয় ছোট-বড় ৪৬টি দল।
শুধু প্রতিযোগিতা নয়, এই উৎসব যেন এক মহামিলনমেলাও। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে নানা বেসরকারি সংস্থাও অংশ নেয় বৈঠার এই দৌড়ে। পুরো আয়োজনে ছিল ১২টি ভিন্ন বিভাগে পুরস্কারের ব্যবস্থা। প্রতিটি দলের চোখে-মুখে ছিল উচ্ছ্বাস, একে অপরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টাই যেন ছিল বড় প্রাপ্তি।
প্রতিযোগিতায় এবার নতুনদের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই বলছিলেন, আগে তারা ছন্দ বুঝতেন না, ইতিহাস জানতেন না। কিন্তু এখন সঙ্গীদের সাহায্যে নৌকা চালানোর কৌশল, বৈঠার ছন্দ, দলের সঙ্গে তাল মেলানোর কৌশল সবই শিখে নিয়েছেন। তাদের মতে, প্রতিদিনই কিছু না কিছু নতুন শেখার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
একজন প্রতিযোগী বলেন, “আগে আমরা শুধুই বৈঠা চালাতাম, এখন জানি কিভাবে দলগতভাবে এগিয়ে যেতে হয়। আমরা এখন একটি পূর্ণাঙ্গ দল একসঙ্গে ছুটি, একসঙ্গে জিতি, সেটাই সবচেয়ে বড় আনন্দ।”
এই ড্রাগন বোট ফেস্টিভাল অনেকটাই আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচের মতো। প্রতিযোগিতার উৎপত্তি চীনের লিংনান অঞ্চলে প্রায় এক হাজার বছর আগে। যদিও আধুনিক ড্রাগন বোট রেসিংয়ের সূচনা হয় হংকংয়ে, প্রায় ৪০ বছর আগে।
এই উৎসবের পেছনে রয়েছে একটি হৃদয়স্পর্শী কাহিনি। চীনের বিখ্যাত কবি কু ইউয়ান যখন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নদীতে আত্মাহুতি দেন, তখন স্থানীয়রা তাকে রক্ষা করতে ছুটে যায় নৌকায় করে। নদীতে ছুড়ে দেয় রাইস ডাম্পলিং, যাতে মাছ কবিকে না খায়। এই ঘটনাকেই কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ড্রাগন বোট ফেস্টিভাল এক ঐতিহ্য, যা আজ আনন্দ আর একাত্মতার বিশ্বউৎসবে পরিণত হয়েছে।
হংকংয়ে প্রতি বছর এই উৎসব ঘিরে জড়ো হয় হাজারো মানুষ, যাদের জন্য ড্রাগন বোট শুধু প্রতিযোগিতা নয়, বরং একটি সংস্কৃতি, একটি চেতনার নাম। বৈচিত্র্য, দলগততা আর ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রকাশই যেন এই উৎসবের প্রাণ।