শিক্ষার্থী ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট অনির্দিষ্টকাল স্থগিত করল ট্রাম্প প্রশাসন

- আপডেট সময় ১১:৫০:৩৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
- / 12
যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থগিত এবং ভিসা আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক নির্দেশনায় বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলোকে শিক্ষার্থী ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যালেন্ডার থেকে সাক্ষাৎকারের নির্ধারিত সময় বাদ দিতে বলেছে। তবে যাদের সাক্ষাৎকারের সময় আগেই নির্ধারিত, তারা সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর স্বাক্ষরিত ওই স্মারকে বলা হয়, ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও বিনিময় কর্মসূচির আওতাভুক্ত আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যাচাইয়ের প্রক্রিয়া আরও জোরদার করা হবে।
এই নতুন ব্যবস্থার ফলে মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোর ওপর বাড়তি চাপ, সময়সাপেক্ষ নতুন প্রক্রিয়া ও প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া সম্প্রসারণের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
এই পদক্ষেপ এমন সময়ে নেওয়া হলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরোধ চলছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, এসব প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত বামপন্থী চিন্তাধারার অনুসারী এবং ইহুদিবিদ্বেষ ও বৈষম্যমূলক ভর্তি নীতি অনুসরণে সহায়তা করছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্পের সমালোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। তাঁর প্রশাসন সম্প্রতি হার্ভার্ডের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি ও গবেষক আমন্ত্রণ অনুমোদন বাতিল করে। যদিও একজন ফেডারেল বিচারক সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিদেশি শিক্ষার্থীদের দেওয়া বেশি টিউশন ফি থেকে অর্থায়ন পায়। এসব শিক্ষার্থী সাধারণত নিজ নিজ দেশের মার্কিন দূতাবাসে সাক্ষাৎকার দিয়ে ভিসা গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যায়।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস সাংবাদিকদের জানান, “কে আমাদের দেশে প্রবেশ করছে, সে বিষয়ে আমাদের যাচাই প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা অব্যাহত থাকবে।”
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বরাদ্দকৃত শত শত মিলিয়ন ডলারের সরকারি সহায়তা বন্ধ করে দেন। বিদেশি কিছু শিক্ষার্থীকে দেশছাড়া করাসহ হাজার হাজার ভিসা বাতিল করা হয়। যদিও এসব পদক্ষেপের অনেকগুলো আদালতের মাধ্যমে স্থগিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্বের চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার পরিবেশ আরও অনিশ্চিত করে তুলছে।
এছাড়া, চলমান নিয়ম অনুযায়ী, যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে চান, তাঁদের ভিসা পেতে সাক্ষাৎকার বাধ্যতামূলক। অথচ সাম্প্রতিক ঘোষণা অনুযায়ী, অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পাওয়া শিক্ষার্থীরা এখন সাক্ষাৎকারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও বৈচিত্র্যকে বড় ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।