ঢাকা ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আজ সর্বদলীয় ও নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডেকেছে ভারত সরকার

খবরের কথা ডেস্ক
  • আপডেট সময় ১১:৪৩:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
  • / 12

ছবি সংগৃহীত

 

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে চালানো ‘অপারেশন সিঁদুর’-কে ভারতের ‘প্রত্যাঘাতের অধিকার’ প্রয়োগ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেন, পেহেলগামে নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সীমান্ত পেরিয়ে সম্ভাব্য আরও হামলা রুখতেই এই সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে।

বুধবার সকালে নয়াদিল্লিতে এক ব্রিফিংয়ে মিশ্রি জানান, ভারত এই অভিযানে ‘পরিমিত, সমানুপাতিক ও দায়িত্বশীল’ আচরণ করেছে এবং কেবল সন্ত্রাসী অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। তিনি বলেন, “আমরা সাধারণ নাগরিক বা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করিনি। আমাদের লক্ষ্য ছিল কেবল সন্ত্রাসবাদীদের কাঠামো ধ্বংস করা।”

এই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর দুই নারী কর্মকর্তা কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। তাঁরা জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৫ মিনিট থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে মোট ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় ধ্বংস করা ঘাঁটির স্যাটেলাইট ছবি গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হয়।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ও নিরাপত্তা কমিটির (সিসিএস) জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। এতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন।

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকেও ইতোমধ্যে অবহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতির কার্যালয় এক্সে পোস্ট করে জানায়, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মোদি তাঁর নির্ধারিত ইউরোপ সফর বাতিল করেছেন। একইভাবে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও বাতিল করেছেন রাশিয়ায় ‘ভিক্টরি ডে’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ।

এদিকে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল জানিয়েছেন, ভারতের এ হামলা উসকানিহীন এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতির বাইরে নয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, জাপানসহ একাধিক দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। দোভাল স্পষ্ট করে বলেন, ইসলামাবাদ উত্তেজনা বাড়ালে ভারত কঠোর জবাব দিতে প্রস্তুত।

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে পোস্ট করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য গর্বিত।”

সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ভারতের বিমান সংস্থাগুলো ফ্লাইটে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। ইন্ডিগো বাতিল করেছে ১৬৫টি ফ্লাইট। এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস এবং স্পাইসজেটও সীমান্তবর্তী এলাকায় ফ্লাইট বাতিল ও পরিবর্তন করেছে।

এ ছাড়া, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের ২৪৪টি জেলায় যুদ্ধকালীন মহড়ার নির্দেশ দিয়েছে। ১৯৭১ সালের পর এই প্রথমবার কেন্দ্রীয় সরকার এমন নির্দেশনা জারি করল। উদ্দেশ্য যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা এবং ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা।

গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিযোগ তোলে ভারত। যদিও পাকিস্তান তা জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে। তবে এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আজ সর্বদলীয় ও নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডেকেছে ভারত সরকার

আপডেট সময় ১১:৪৩:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

 

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে চালানো ‘অপারেশন সিঁদুর’-কে ভারতের ‘প্রত্যাঘাতের অধিকার’ প্রয়োগ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি বলেন, পেহেলগামে নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সীমান্ত পেরিয়ে সম্ভাব্য আরও হামলা রুখতেই এই সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে।

বুধবার সকালে নয়াদিল্লিতে এক ব্রিফিংয়ে মিশ্রি জানান, ভারত এই অভিযানে ‘পরিমিত, সমানুপাতিক ও দায়িত্বশীল’ আচরণ করেছে এবং কেবল সন্ত্রাসী অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। তিনি বলেন, “আমরা সাধারণ নাগরিক বা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করিনি। আমাদের লক্ষ্য ছিল কেবল সন্ত্রাসবাদীদের কাঠামো ধ্বংস করা।”

এই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর দুই নারী কর্মকর্তা কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। তাঁরা জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৫ মিনিট থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে মোট ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় ধ্বংস করা ঘাঁটির স্যাটেলাইট ছবি গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হয়।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ও নিরাপত্তা কমিটির (সিসিএস) জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। এতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন।

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকেও ইতোমধ্যে অবহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতির কার্যালয় এক্সে পোস্ট করে জানায়, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মোদি তাঁর নির্ধারিত ইউরোপ সফর বাতিল করেছেন। একইভাবে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও বাতিল করেছেন রাশিয়ায় ‘ভিক্টরি ডে’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ।

এদিকে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল জানিয়েছেন, ভারতের এ হামলা উসকানিহীন এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতির বাইরে নয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, জাপানসহ একাধিক দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। দোভাল স্পষ্ট করে বলেন, ইসলামাবাদ উত্তেজনা বাড়ালে ভারত কঠোর জবাব দিতে প্রস্তুত।

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে পোস্ট করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য গর্বিত।”

সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ভারতের বিমান সংস্থাগুলো ফ্লাইটে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। ইন্ডিগো বাতিল করেছে ১৬৫টি ফ্লাইট। এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস এবং স্পাইসজেটও সীমান্তবর্তী এলাকায় ফ্লাইট বাতিল ও পরিবর্তন করেছে।

এ ছাড়া, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের ২৪৪টি জেলায় যুদ্ধকালীন মহড়ার নির্দেশ দিয়েছে। ১৯৭১ সালের পর এই প্রথমবার কেন্দ্রীয় সরকার এমন নির্দেশনা জারি করল। উদ্দেশ্য যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা এবং ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা।

গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিযোগ তোলে ভারত। যদিও পাকিস্তান তা জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে। তবে এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।