রাখাইন সীমান্তে মানবিক করিডর নিয়ে শঙ্কা, বাড়ছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

- আপডেট সময় ০২:৫৩:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
- / ৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার পর হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। প্রতিদিনই সীমান্ত পেরিয়ে নতুন করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। অভিযোগ উঠেছে, রাখাইনে আরাকান আর্মির নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, এই করিডর চালু হলে বাংলাদেশ আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি সংকটে পড়তে পারে।
সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারের অনেকেই বলছেন, ২০১৭ সালে মানবিকতার কথা বলে শেখ হাসিনা সরকার সীমান্ত খুলে দিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী ‘মানবতার মা’ উপাধিও পান। অথচ ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত তাদের একজনকেও নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কালের কণ্ঠকে বলেন, “যার বাবাকে কুমিরে খেয়েছে, সে ঢেঁকি দেখলেও ভয় পায়। সেই বাস্তবতায় নতুন করে মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।”
টেকনাফ-উখিয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, “মানবিক করিডরের আওয়াজ শোনার পর থেকেই অনুপ্রবেশ উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। নতুন করে মানবতার করিডর বাস্তবায়ন করা হলে তা হবে বাংলাদেশের জন্য মড়ার উপর খাড়ার ঘা।”
এদিকে সীমান্তে স্টারলিংক প্রযুক্তির উপস্থিতি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করিডরের বিরোধিতা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। অনেকেই মানবিক করিডরের আড়ালে নতুন সংকটের আশঙ্কা করছেন। ফেসবুকে আবুল কাশেম সিকদার লিখেছেন, “মানবিক কারণে করিডর দিলে, অমানবিক মানুষের আগমন ঘটতে পারে। তখন কী হবে?”
আইনজীবী মোহাম্মদ ফয়সাল মত প্রকাশ করে বলেন, “রোহিঙ্গাকে করিডর দেওয়া মানে দেশ অরক্ষিত করে দেওয়া।” তবে পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফ্রু উদ্দিন চৌধুরী মত দেন, “শর্তসাপেক্ষে করিডর দেওয়া যেতে পারে, তবে শর্ত হলো—বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে।”
জাতিসংঘ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে এসেছে। আরাকান আর্মির সদস্যরা রোহিঙ্গাদের ভাষায় ‘মগবাগি’ তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, নিপীড়ন করছে, এমনকি অর্থ আদায় করে সীমান্ত পার করিয়ে দিচ্ছে।
রবিবার রাখাইনের ভুচিদং বউবলি গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী নূরনাহার বেগম জানান, তাকে ও তার দুই সন্তানকে সীমান্ত পার করাতে আরাকান আর্মির সদস্যরা নিয়েছে ৪৫ লাখ কিয়েত, যা প্রায় এক লাখ ষাট হাজার টাকা। তার স্বামীসহ পরিবারের আরো পাঁচ সদস্য এখনও আরাকানে আটকা পড়ে আছেন টাকার অভাবে।
বাংলাদেশে প্রবেশের পরও রোহিঙ্গাদের হয়রানি কমছে না। নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ি সীমান্ত দিয়ে ঢোকার সময় স্থানীয় দালাল চক্র জনপ্রতি ৪ হাজার টাকা করে আদায় করেছে বলে জানান নূরনাহার। বর্তমানে তিনি কুতুপালং ক্যাম্পের ডি ব্লকে এক আত্মীয়ের কাছে আশ্রয়ে রয়েছেন।
সীমান্ত পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে। মানবিক করিডরের নামে যেন আরেকটি আন্তর্জাতিক বোঝা কাঁধে না চাপে এমন আশঙ্কায় ভুগছে সীমান্তবাসী ও সাধারণ নাগরিকরা।