নতুন হাইড্রোজেন বোমার সফল বিস্ফোরণ চালাল চীন

- আপডেট সময় ১২:০৬:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
- / 42
বিশ্বের সামরিক শক্তির ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে চীন। দেশটির বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি সফলভাবে পরীক্ষা চালিয়েছে এক নতুন ধরনের হাইড্রোজেন বোমা, যা পুরনো পারমাণবিক অস্ত্র থেকে একেবারেই আলাদা। চীনের রাষ্ট্রীয় শিপবিল্ডিং কর্পোরেশন (CSSC) এই নতুন অস্ত্রের উদ্ভাবক, যা ‘নন-নিউক্লিয়ার’ বা অ-পারমাণবিক হাইড্রোজেন বোমা হিসেবে পরিচিত।
টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ইকোনমিক টাইমস জানায়, বোমাটির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এতে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের ম্যাগনেসিয়াম-মিশ্রিত সলিড হাইড্রোজেন। এই উপাদান আগুনকে দীর্ঘ সময় ধরে জ্বলতে সাহায্য করে এবং প্রচলিত বিস্ফোরকের তুলনায় প্রায় ১৫ গুণ বেশি সময় ধরে প্রচণ্ড তাপ ছড়াতে সক্ষম। বিস্ফোরণের সময় প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোজেন গ্যাস নির্গত হয়, যা বাতাসের সংস্পর্শে এক ভয়ঙ্কর আগুনের গোলায় পরিণত হয়।
এই পরীক্ষামূলক বোমার ওজন ছিল মাত্র ২ কেজি, তবে এর বিস্ফোরণে উৎপন্ন তাপমাত্রা এক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। এই তাপমাত্রা অ্যালুমিনিয়ামের মতো ধাতুকে গলিয়ে ফেলতে সক্ষম, যা একে প্রচলিত অস্ত্রের তুলনায় অনেক বেশি ভয়াবহ করে তোলে। গবেষকদের মতে, এই অস্ত্র নির্দিষ্ট সামরিক স্থাপনা ও অবকাঠামোর বিরুদ্ধে ব্যবহারে বিশেষভাবে কার্যকর হতে পারে।
সিএসএসসি-এর প্রধান গবেষক ওয়াং জুয়েফেং জানান, “হাইড্রোজেন গ্যাস অতি দ্রুত দাহ্য এবং ভয়ঙ্কর গতিতে আগুন ছড়িয়ে দিতে পারে। বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত বায়ুচাপ, যা ‘পিক ওভার প্রশার’ নামে পরিচিত, ধ্বংসের মাত্রা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই বোমা মাত্র দুই মিটার দূরত্বে ৪২৮.৪৩ কিলোপাসক্যাল পিক ওভার প্রশার সৃষ্টি করেছে, যা সাধারণ বিস্ফোরণের প্রায় ৪০ শতাংশ। তবে, এর তাপের ধ্বংসক্ষমতা অনেক বেশি, যা সামরিক অবকাঠামো সহজেই গলিয়ে দিতে পারে।”
এই অস্ত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি বিস্ফোরণের পর দীর্ঘ সময় ধরে তাপ ধরে রাখতে পারে এবং আশপাশের এলাকা ধ্বংস না করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত হানতে পারে। ফলে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, কিংবা যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নিখুঁতভাবে হামলা চালানো সম্ভব।
চীনের এই সাফল্য শুধু তাদের সামরিক প্রযুক্তির উন্নয়নই নয়, বরং ভবিষ্যতে শক্তি-ভিত্তিক অস্ত্রের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার নতুন মাত্রা সৃষ্টি করবে বলেই আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞরা।