বয়স বাড়ার সঙ্গে মানসিক চাপের পরিবর্তন: বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি

- আপডেট সময় ০১:০৮:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫
- / 9
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস আজকের জীবনে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তবে এই চাপ সব বয়সে একরকম থাকে না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যেমন মানুষের জীবনচর্চা ও চিন্তার ধরন বদলায়, তেমনি মানসিক চাপের ধরন, উৎস এবং তা সামলানোর কৌশলও পাল্টে যায়। প্রতিটি বয়সের ভিন্ন বাস্তবতা মানসিক চাপের ধরনকে প্রভাবিত করে।
শিশুদের ক্ষেত্রে মানসিক চাপের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায় পারিবারিক অশান্তি, লেখাপড়ার চাপ, কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে মানিয়ে চলার মতো সামাজিক প্রতিযোগিতা। কৈশোরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে এই চাপ আরও বাড়ে। পরীক্ষার ফলাফলের ভয়, অভিভাবকের প্রত্যাশা, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা—এসব বিষয় কিশোর-কিশোরীদের মানসিক ভারসাম্যকে নষ্ট করতে পারে।
তারুণ্যে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে চাপের উৎস পরিবর্তিত হয়। প্রেম-সম্পর্ক, উচ্চশিক্ষা বা পেশা গড়া, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং আত্মপরিচয়ের সংকট তরুণদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। তারা অনেক সময় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে গভীর মানসিক অস্থিরতার মধ্যে পড়ে যায়।
মধ্যবয়সে চিত্রটি আরও জটিল হয়। কাজের চাপ, সংসারের দায়িত্ব, সন্তান প্রতিপালন এবং বয়সী বাবা-মায়ের দেখভাল—সবকিছু মিলে চাপের মাত্রা বেড়ে যায় অনেক গুণ। তবে এই বয়সের মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই মানসিক চাপ সামাল দিতে তুলনামূলকভাবে বেশি দক্ষ হন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, সামাজিক যোগাযোগ এবং সংকট মোকাবিলার ক্ষমতা তাদের আত্মস্থ করে তোলে।
বৃদ্ধ বয়সে চাপের রূপ আরও বদলে যায়। শারীরিক দুর্বলতা, একাকীত্ব, কাছের মানুষকে হারানোর যন্ত্রণা এবং আর্থিক অনিশ্চয়তা এই বয়সে মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এই বয়সের মানুষকে অনেক বেশি মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা দেয়। ফলে তারা সংকটের মধ্যেও মানসিক ভারসাম্য ধরে রাখতে পারেন।
নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থা একটি বিশেষ সময়, যখন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের পাশাপাশি অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ এবং নিজ জীবনের বড় এক রূপান্তরের চিন্তা মানসিক চাপে রূপ নেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময়ে পরিবারের সহায়তা এবং প্রয়োজন হলে পেশাদার মানসিক সহায়তা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
যদিও বয়সের সঙ্গে চাপের ধরন পরিবর্তিত হয়, তবে কোনো বয়সেই মানসিক চাপকে অবহেলা করা উচিত নয়। সময়মতো সঠিক উপায়ে আত্মসচেতনতা, জীবনের ভারসাম্য রক্ষা এবং মানসিক যত্নের মাধ্যমে চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানসিক চাপের উপস্থিতি অস্বাভাবিক নয়—তবে তা মোকাবেলায় সচেতনতা ও সহানুভূতিশীল পরিবেশই মানুষকে করে তোলে স্থিতিশীল ও সুস্থ।